reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ জুন, ২০২২

এক ফলের একাধিক নাম, গুণ তারও বেশি!

ছবি : সংগৃহীত

ফলটি বাংলাদেশেই এখন চাষ হচ্ছে। নাম স্থান ভেদে ভিন্ন। যেমন- রোজেলা, চুকাই, চুকুরি, মেস্তা, হড়গড়া কিংবা হইলফা। যে নামেই ডাকেন ফল কিন্তু একটাই। এক ফলের এতগুলো বাহারি নামই শুধু নয়, ফলটির গুণাগুণ তার চেয়েও অধিক। বাংলাদেশে ফলটি ব্যাপক চাষের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষিবিদরা।

চুকাই, চুকুরি, মেস্তা, হড়গড়া, হইলফা বাংলাদেশের নানা প্রান্তে একেক নামে পরিচিত। এটি সারাদেশজুড়ে হয়। তবে ইদানীং বাংলাদেশে রোজেলা হিসেবে বেশ পরিচিতি পাচ্ছে।

বিশ্বের কিছু এলাকায় হিবিস্কাস টি হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে। শহরে কাঁচাবাজারে গিয়ে আপনারা অনেকেই হয়ত দেখেছেন ঝুড়িতে নিয়ে বিক্রেতা বসে আছেন। খয়েরি ধাঁচের লাল ফলটি, দেখলে প্রথমে ফুল বলে মনে হয়। কিন্তু আসলে এটি একটি ফল।

বাংলাদেশে এর ব্যবহার বৈজ্ঞানিক নাম রোজেলা এবং সেই নামেই বিশ্বের অনেক দেশে এটি পরিচিত। বাংলাদেশে অবশ্য এটি নতুন কিছু নয়। এর রয়েছে নানা রকম ব্যবহার।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকার শাহিন আক্তারের পরিবারের সবার পছন্দের খাবার এটি। তিনি বলছিলেন, আমরা এটা ভর্তা করে খাই, ছোট মাছের মধ্যে দেই। শুধু এই ফল দিয়ে একটা টক ঝোল তরকারি রান্না করা হয়। এটা দিয়ে আচারও বানানো যায়।

শাহিন আক্তার আরও বলেন, আমরা খাই, কারণ খেতে ভালো লাগে। ঠিকভাবে রান্না করতে পারতে হবে। বেশি দিয়ে ফেললে অনেক টক হয়ে যায়। কিন্তু অনেকে ওষুধ হিসেবেও খায়।

ফলটি দিয়ে ডাল রান্না করা যায়। স্বাদে টক বলে ইদানীংকালে এই ফল দিয়ে অনেকে জ্যাম ও জেলি বানিয়ে থাকেন। এর গাছের পাতাও শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ-ওষুধি ব্যাবহার পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলছেন, এই ফলটি ভিটামিন-সি দিয়ে ভরপুর। এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম এবং একটা ভালো ধরনের প্রোটিন। এর পাতারও রয়েছে একই ধরনের পুষ্টিগুণ। এ কারণে এর অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে বলে মনে করা হয়।

এতে রয়েছে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হার্টের জন্য উপকারী পুষ্টিগুণ। এটি ত্বকের অসুখ রোধ করে। কেটে নয়, আস্ত শুকানোর কারণে শুকনো চায়ের মধ্যেও ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অনেকটাই রয়ে যায়।

নাটোরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম ৩০ বছর ধরে ওষুধি গাছের চাষ করে আসছেন। গত দুই বছর হলো তিনি বাণিজ্যিকভাবে রোজেলা চাষ করছেন। তবে তিনি এটি কাঁচা নয়, শুকিয়ে চা তৈরি করে বিক্রি করছেন।

কিভাবে শুরু করলেন এ সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, এই গাছ আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই ছিল। আমি সারাজীবন কৃষক। বছর দুয়েক আগে একটা এনজিও'র কাছে ধারণা পেলাম যে, এটা বাণিজ্যিকভাবে কিভাবে চাষ করা হয়। তারা আমাকে সাহায্য করেছে। প্রথম আমার নিজের জমিতে অল্প কিছু চাষ করেছিলাম। পরে আমার জমির আশপাশে অন্য চাষিদের জায়গাতেও করেছি। এই বছর ৯ বিঘা জমিতে লাগিয়েছি।

শহিদুল ইসলাম বলছিলেন, গাছটিতে খুব বেশি পানি লাগে না। বেশি রোদ দরকার হয়। বর্ষা ও শীত এর প্রধান মৌসুম। একটি নির্দিষ্ট লাল রং হওয়ার পর ফলগুলো উঠানো হয়। ফল থেকে বীজগুলো বের করে ফেলা হয়। এরপর হালকা পানি ছিটিয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে দিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এটি শুকানো হয়।

পরে মোড়কজাত করা হয়। বাইরের আর্দ্রতার কারণে এটি রোদে শুকালে স্বাদ ও গন্ধ ভালো পাওয়া যায় না।

২০ কেজি কাঁচা ফল শুকিয়ে এক কেজির মতো শুকনো রোজেলা পাওয়া যায়। তিনি জানিয়েছেন, এক কেজি শুকনো চা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। খুচরা বিক্রি হয় আরও বেশি দামে। এক টুকরো চা বা শুকনো ফলের দাম ৩০ টাকা। মূলত ফেসবুকে বিক্রি করেন তিনি।

তার বাগানে এসেও কেনেন অনেকে। তিনি বলছেন, এর যে ওষুধি গুণ আছে বলে মনে করা হয়, এ জন্য এটি অনেকেই কিনছেন।

ফলটির বাণিজ্যিক চাষে সম্ভাবনা বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট সম্প্রতি রোজেলা চা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পাট পাতা দিয়ে চায়ের উদ্ভাবক বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের উপদেষ্টা এইচ এম ইসমাইল খান বলছেন, শুকিয়ে চা হিসেবে খাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশে রোজেলা চা বা শরবত হিসেবে এটি খাওয়া হয়। ঢাকায় অনেক দোকানে ইদানীং বিদেশ থেকে আমদানি করা রোজেলা চা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমদানির কোনও অর্থ হয় না। কারণ বাংলাদেশেই এটি খুব ভালোভাবে চাষ করা সম্ভব। সূত্র : বিবিসি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোজেলা, চুকাই, চুকুরি, মেস্তা, হড়গড়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close