শিগগিরই আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার আগে ও পরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগের পর সরে গেছেন প্রধান বিচারপতিসহ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারক।
এমন অবস্থায় সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গতকাল ১১ আগস্ট তাকে বঙ্গবভনে শপথ পড়ানো হয়। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হলেও ফাঁকা আছে আপিল বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া।
গত শনিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ছয় বিচারপতি পদত্যাগ করায় আপিল বিভাগে বিচারক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য দ্রুত শূন্যতা পূরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।
আপিল বিভাগে নিয়োগের পরপরই হাইকোর্ট বিভাগেও বেশকিছু বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। কারণ আপিল বিভাগে নিয়োগের পর হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক সংকট আরও বাড়বে। বর্তমানে আপিল বিভাগে দুইজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮১ জন বিচারপতি রয়েছেন।
আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন বেশ কয়েকজন বিচারপতির নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন-হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি শেখ আব্দুল আওয়াল, বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক।
বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সংবিধানের ৯৫ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্র্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্র্রপতি অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়োগদান করবেন।’ ৯৫ (২) অনুসারে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছর অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে, বা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্র্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে, তিনি বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
নতুন প্রধান বিচারপতি বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে ৮টি বেঞ্চ চালু করেছেন। সোমবার থেকে এসব বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। দু-এক দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে কিছু বিচারক নিয়োগ দিতে পারে।
এদিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানাই। তার নেতৃত্বে বিচার বিভাগ অনেক এগিয়ে যাবে এমনটাই আশা করছি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। এ পদে একজন জানাশোনা ও চৌকস বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। তার নিয়োগে আমি মনে করি বিচার বিভাগের সততা ও যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
এদিকে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্ট বিভাগে বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন-এমন বেশ কয়েকজনের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন গত সপ্তাহে দুদফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিগত দিনে যারা দলবাজ বিচারপতি রয়েছেন তাদের পদ্যতাগ করার দাবি তোলেন তিনি।
গত ৮ আগস্ট ৫০ বিচারপতিকে পদত্যাগের দাবি জানান সাধারণ আইনজীবীরা। সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। তারা জানান, দলবাজ বিচারপতিদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে গত রোববার নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিল বিভাগের মতো হাইকোর্ট বিভাগেও সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না।
হাইকোর্ট বিভাগ ঢেলে সাজানো প্রয়োজন মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অবশ্যই মনে করি। যে কারণে জনরোষ তৈরি হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগে সংস্কার কেন হবে না।
পিডিএস/এমএইউ