reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার : এবার নীলফামারীর বার সভাপতিকে হাইকোর্ট তলব

ফাইল ছবি

আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারিত্বমূলক, আক্রমণাত্মক ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। অপর দুই আইনজীবী হলেন- মো. আজহারুল ইসলাম ও ফেরদৌস আলম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো পত্রে বলা হয়, গত ২৮/১১/২০২২ খ্রি. তারিখে আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির জন্য ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভিকটিম মোছা. মারুফা-কে পরীক্ষা অঙ্কে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। এবং অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করি। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অত্র মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীগণ অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণ পূর্বক হামলা করার প্রয়াস চালায়।

তারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না, নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর, এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টা পাল্টা আদেশ দাও।’ এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সাথে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করাকালীন সময়েও ওই আইনজীবীরা আমাকে জঘন্য ভাষায় বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহ-সভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। উক্ত সময়ে উপস্থিত অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসাবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি এবং উক্ত ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অপরাপর বিজ্ঞ বিচারকগণ নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এমতবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়।

গত ২৯ ডিসেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠে।

এছাড়াও সম্প্রতি খুলনা, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের কয়েকটি জেলায় বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের তলবের ঘটনা ঘটেছে।

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাইকোর্ট,নীলফামারী,বার সভাপতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close