reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভয়াবহ ভূমিকম্প ও এত প্রাণহানি যে কারণে

ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে আঘাত হানা একটি বড় ধরণের ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। এর ২৮ ঘণ্টার পর মঙ্গলবার তুরস্কে আবারও ভূমিকম্প হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে হতাহতের তথ্য মেলেনি এখনো।

এদিকে তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর সোমবার আরও বেশ কয়েকটি আফটারশক বা ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূতি হয়েছে। এর মধ্যে একটি কম্পন ছিল মূল ভূমিকম্পের মতোই শক্তিশালী।

কেন এত ভয়াবহ ছিল? এটি একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প ছিল। যার মাত্রা ছিল ৭.৮, যেটি ‘উল্লেখযোগ্য’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ফল্ট লাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে এটি আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেছেন, ‘যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। গত ১০ বছরের মধ্যে মাত্র দুটি ভূমিকম্প এই মাত্রার ছিল। আর এর আগের ১০ বছরে মাত্র চারটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল।’

তবে শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভোরের দিকে, যখন মানুষ ঘরের ভেতরে ঘুমাচ্ছিল। ভবনের দৃঢ়তাও একটি বিষয়।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকানো অ্যান্ড রিস্ক কমিউনিকেশন বিভাগের রিডার ড. কারমেন সোলানা বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত দক্ষিণ তুরস্ক ও বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো খুব একটা ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়। তাই জীবন বাঁচানো এখন নির্ভর করবে উদ্ধার তৎপরতার উপর। জীবিতদের উদ্ধারে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪৮ ঘণ্টা পর জীবিত মানুষের সংখ্যা অনেক কমে যায়।’

এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে গত ২০০ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি বা কোনো সতর্কতা সংকেতও ছিল না। তাই প্রায়ই ভূমিকম্প মোকাবেলা করে এমন অঞ্চলের তুলনায় এখানকার প্রস্তুতির মাত্রা বেশ কম হবে।

ভূমিকম্পের কারণ কী? পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ আলাদা বিট দিয়ে গঠিত, যাকে প্লেট বলা হয়, যা একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করে। এই প্লেটগুলি প্রায়শই নড়াচড়া করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাশে থাকা অন্য আরেকটি প্লেটের সাথে ঘর্ষণের মাধ্যমে এই নড়াচড়া প্রতিরোধ করা হয়। তবে চাপ বেশি বেড়ে গেলে কখনো কখনো একটি প্লেট হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দেয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ সরে যায়।

এবার এরাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে যায় ও উত্তর দিকে সরে যাওয়া আনাতোলিয়ান প্লেটে গিয়ে ধাক্কা দেয়। প্লেটগুলোর এ ধরনের ঘর্ষণের কারণে অনেক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। এর কারণে ১৮২২ সালের ১৩ অগাস্ট ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা সোমবার হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের তুলনায় বেশ কম। তা সত্ত্বেও, উনিশ শতকের ভূমিকম্পের ফলে এলাকার শহরগুলির প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, শুধু আলেপ্পো শহরেই সাত হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। ক্ষতিকর আফটারশক প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকে।

বর্তমান ভূমিকম্পের পরে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি আফটারশক হয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, এটি এই অঞ্চলে এর আগে হওয়া ভূমিকম্পের মতোই হবে।

কীভাবে ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়? মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল (Mw) নামে ভূমিকম্প পরিমাপ করার একটি স্কেল আছে। এটি এরআগে ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র হিসেবে পরিচিত রিখটার স্কেলকে প্রতিস্থাপন করেছে। রিখটার স্কেলকে এখন পুরানো এবং তেমন নির্ভুল নয় বলে বিবেচনা করা হয়। ভূমিকম্পের যে সংখ্যাটি দেয়া হয়, তা দিয়ে ফল্ট লাইন কতটুকু সরেছে এবং যে গতি এই সরানোর পেছনে কাজ করেছে সেটি নির্দেশ করে।

২.৫ বা তার কম কম্পন সাধারণত অনুভূত হয় না, তবে যন্ত্রে ধরা পড়ে। পাঁচ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয় এতে সামান্য ক্ষতি হতে পারে। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ শক্তিশালী বলে ধরা হয় এবং এতে মারাত্মক ধরণের ক্ষতি সাধিত হয়। যেমনটি তুরস্কে এবার হয়েছে। ৮ মাত্রার বেশি কোন ভূমিকম্প যে কোনো কিছুর ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে এবং এর কেন্দ্রে থাকা কমিউনিটিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে।

বড় ভূমিকম্পগুলো জাপানের উপকূলে ২০১১ সালে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল যার কারণে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, এর কারণে সুনামি হয়েছিল এবং উপকূলের কাছে থাকা একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬০ সালে চিলিতে। সেখানে ৯.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভূমিকম্প,তুরস্ক,সিরিয়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close