ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড তুরস্ক-সিরিয়ায় লাশ আর লাশ
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ইতোমধ্যে ছয়শ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এখনো ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়েছেন অনেকে। ধসে পড়া বাড়িগুলো থেকে একের পর একে বের করা হচ্ছে লাশ। স্বজন আর আহতদের আহাজারিতে দুই দেশে আকাশ ভারী হয়ে এসেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, গত ৮০ বছরের ইতিহাসে সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক ও সিরিয়া। ভূমিকম্পে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ ১৩শ’রও বেশি প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে শত শত মানুষ আটকা পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন দেশ দুটির কর্মকর্তারা।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়া তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গজিয়ানতেপ শহরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, সাইপ্রাস, ইসরায়েলেও।
এদিকে, মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কের সাতটি প্রদেশে অন্তত ২৮৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন আরও ৪৪০ জন।
তবে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা ৩৮৬ জনে পৌঁছেছে এবং ৬৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেটস বলছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কমপক্ষে ১৪৭ জন মারা গেছেন।
সিরিয়ার আলেপ্পো এবং হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৩০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত এলাকায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
তুরস্কের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে বলেছেন, তুরস্কের গজিয়ানতেপ এবং কাহরামানমারাস প্রদেশে প্রায় ৯০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর ইস্কান্দারউনে একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে। তবে এই হাসপাতালে হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
‘দুর্ভাগ্যবশত, একই সময়ে আমরা অত্যন্ত কঠিন আবহাওয়ার সাথেও লড়াই করছি,’ সাংবাদিকদের বলেছেন ওকতে।
ভূমিকম্প বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, তুরস্কে সোমবারের এই ভূমিকম্প ৮ দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ৮০ বছরেরও বেশি সময় আগে দেশটিতে আজকের মতো শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূতাত্ত্বিক স্টিফেন হিকস বলেন, আগের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটিও ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ছিল। সেটি ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে উত্তর-পূর্ব তুরস্কে আঘাত হানে এবং এতে ৩০ হাজার মানুষ মারা যান।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর এলাজিগে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ৪১ জন নিহত ও এক হাজার ৬০০ জনের বেশি আহত হন।
সিরিয়ার জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় এক রেডিও স্টেশনকে বলেছেন, আজকের এই ভূমিকম্প তাদের ভূকম্প কেন্দ্রের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সিরিয়ার এই ভূমিকম্প কেন্দ্র ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পিডিএস/এমএইউ