reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

রাস্তায় না নেমে এবং ঘরে থেকে জনতার নীরব ধর্মঘট

মিয়ানমারে পাশ্চাত্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা

ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সে দেশের গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার ‘নীরব ধর্মঘট’ পালন করেছেন।

বিক্ষোভকারীরা জনসাধারণকে বাড়ির ভেতরে থেকে এবং ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানোর ডাক দেন। সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। রাজধানী নেপিডোসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে রাস্তা, সড়ক ও বাজারহাট ছিল ফাঁকা। এই বার্ষিকীতে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক বাহিনী বলেছে, মিয়ানমার এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, ফলে সে দেশে চলতি বছর একটি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সেনাশাসকদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। খবর বিবিসির।

মিয়ানমারের একজন বিশিষ্ট নাগরিক অধিকারকর্মী তায়জার সান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সামরিক বাহিনী যে কারচুপির নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে, ‘জনগণ তা মেনে নেবে না’ বলে প্রমাণ করার জন্যই এই ধর্মঘট চলছে।

আরেকজন গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী থিনজার স্যুনলেই ই জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে, বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকায়। মিয়ানমার থেকে পাওয়া ছবিতে গতকাল ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে রাস্তাঘাট জনমানবহীন দেখা যাচ্ছে। দেশটিতে রাজনৈতিক বন্দিদের পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, ভিন্নমত দমনে সামরিক জান্তার অভিযানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে। সেনাশাসনের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারছে না এবং জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেড় কোটি লোক চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন।

দেশটির বেশিরভাগ অংশে গৃহযুদ্ধ চলছে। অভ্যুত্থানের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনো বিরোধীদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনায় রাজি নয়।

মিয়ানমারের এমনি এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাশাসকরা এমন একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছে যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই অং সান সু চি কিংবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেবে। এনএলডি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল।

অং সান সু চি অনুগতরা জনগণকে সামরিক শাসকের আয়োজিত যেকোনো ভোট বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের যুক্তি, এই নির্বাচন হবে অবৈধ এবং অবাস্তব। জাতিসংঘ বলছে, এগুলো হবে ‘ভুয়া নির্বাচন’।

দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে সেনাবাহিনী যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তার ফলে নির্বাচন স্থগিত হতে পারে এবং দেশে জরুরি আইনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে বিবিসি সংবাদদাতা জোনাথান হেড খবর দিয়েছেন। তেমনটা ঘটলে মিয়ানমারের ভয়াবহ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো একযোগে বুধবারের বার্ষিকীকে সেনাশাসক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন দফা নিষেধাজ্ঞার দিন হিসেবে ব্যবহার করেছে। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করে এমন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ব্রিটেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘সেনাবাহিনীর অর্থ, জ্বালানি, অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে আনা। বিরোধী কণ্ঠের নৃশংস দমন-পীড়ন, সন্ত্রাসী বিমান হামলা এবং নির্লজ্জ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য (সামরিক) জান্তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’ অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ১৬ ব্যক্তিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা। সেই সাথে তারা সামরিক সরকার-নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রধান ব্যবসায়িক সংস্থা, যা সে দেশের অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিডনি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলোর লক্ষ্য সেনা-অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের কর্মকা- দুর্বল করা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মিয়ানমার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close