reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২২

নারী বিক্ষোভকারীদের যৌনাঙ্গে ইরানি বাহিনীর গুলি

ছবি : সংগৃহীত

ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলা বিক্ষোভে অংশ নেয়া নারীদের যৌনাঙ্গে, মুখে, স্তনে গুলি করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইরানে আহত বিক্ষোভকারীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে গোপনে চিকিৎসা করান। এর সঙ্গে জড়িত নার্স ও চিকিৎসকরা জানান, পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষতস্থানগুলো ভিন্ন। পুরুষ বিক্ষোভকারীদের সাধারণত পা, পশ্চাদাংশ ও পিঠে গুলি করা হয়।

গার্ডিয়ান ইরানের ১০ জন চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, গুরুতর আঘাতের কারণে শত শত ইরানি তরুণ স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুর চোখে গুলি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের ইস্পাহান প্রদেশের এক পুরুষ চিকিৎসক জানান, নারী ও পুরুষ বিক্ষোভকারীদের আলাদাভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ তারা নারীদের সৌন্দর্য নষ্ট করতে চায়।

তিনি বলেন, আমি ২০ বছরের এক নারীকে চিকিৎসা করেছি, যার যৌনাঙ্গে ২টি ছড়রা গুলি ছিল। আরও ১০টি ছড়রা গুলি পাওয়া যায় তার ঊরুতে। এগুলো সহজে বের করা গেলেও যৌনাঙ্গে থাকা ছড়রা গুলি বের করা ছিল চ্যালেঞ্জিং, কারণ ওগুলো মূত্রনালি এবং যোনির মধ্য অংশ ছিল। এতে যোনিতে সংক্রমণ হতে পারত। এমন অবস্থা দেখে আমি তাকে একজন বিশ্বস্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে বলেছি। তখন তিনি জানান, বিক্ষোভে অংশ নেয়ার পর ১০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য তাকে ঘিরে রেখে গুলি করে।

ওই চিকিৎসক আরও জানান, এসব বিষয় তাকে মানসিকভাবে পীড়া দিয়েছে। এতে তিনি কষ্টও পেয়েছেন।

আরও কয়েকজন চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এমন কর্মকাণ্ডে ইরানের কয়েকটি নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এর মধ্যে ইরানের আধাসামরিক বাহিনী বাসিজও রয়েছে। এসব নিরাপত্তা বাহিনী দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের নিয়ম অনুসরণ করছে না। তারা পায়ে গুলি না করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।

তেহরানের কাছের একটি শহর কারাজ। এ শহরের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নারীদের মুখ এবং শরীরের বিশেষ অঙ্গে গুলি করছে, কারণ তারা হীনম্মন্য। নারীদের ওই সব জায়গায় আঘাত করে যৌনতা নিয়ে তাদের মস্তিষ্কে যে জটিলতা রয়েছে তা থেকে তারা মুক্তি পেতে চায়।

এসব অভিযোগ নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি গার্ডিয়ান। সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন থেকেই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে।

তেহরানের অভিযোগ, বিদেশি শত্রুরাই তাদের দেশে অস্থিরতা তৈরি করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪০টি শিশু।

ইরানের মাজানদারা প্রদেশের একজন চিকিৎসক জানান, তিনি নারীদের শরীর থেকে প্লাস্টিক ও ধাতবের তৈরি ছড়রা গুলি বের করেছেন।

তিনি বলেন, নারীরা এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে যেতে লজ্জা পান। এতে অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা করান, যা খুবই বিপজ্জনক।

গত ২৬ অক্টোবর ইরানের মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনে বিক্ষোভ করেন শত শত চিকিৎসক। এ সময় তাদের ওপর ছড়রা গুলি চালানো হয়। এ ঘটনার পর তেহরানের একজন সার্জন তার সহকর্মীদের চিকিৎসা করেছিলেন । তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্ধের মতো গুলি করে। আহতদের মধ্যে একজন বিক্ষোভেই ছিলেন না।’

তেহরানের ওই সার্জন আরও জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২৫ বছরের এক যুবকের চোখে গুলি লাগে, যিনি বিক্ষোভেই ছিলেন না। ওই যুবকের দুই চোখই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু এই যুবকই নন, এমন বহু বিক্ষোভকারীর চোখেই গুলি করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

ইরানের ৪০০ জনেরও বেশি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের স্বাক্ষরসংবলিত একটি চিঠি ইরানি সোসাইটি অফ অফথালমোলজির মহাসচিব মাহমুদ জাব্বারভান্দকে দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে চিকিৎসকরা লেখেন, বিক্ষোভকারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধ করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হয়।

ওই চিঠিতে সই করা কয়েকজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, তারা চারজন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, যাদের প্রায় সবাই অন্ধ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে ২০ বছরের এক যুবক ছিল। যার মুখ থেকে ১৮টি ছড়রা গুলি অপসারণ করা হয়।

গুরুতর আঘাতের জন্য বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে এটি মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে। ইরানের শিরাজ শহরের এক চিকিৎসক জানান, গত মাসের শেষের দিকে জরুরি চক্ষু চিকিৎসা বিভাগের বাইরে নতুন নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন করা হয়।

ইরানের অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে কুর্দিস্তান অঞ্চলে সরকার পুরো শহর অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা পায়ে করে ব্যান্ডেজ এবং ওষুধ লুকিয়ে আনছে।

কুর্দিশ মানবাধিকার কর্মী সোরান মানসোর্নিয়া বলেন, আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। গ্রেপ্তারের ভয়ে হাসপাতালে যাননি এমন একজন আহত ব্যক্তির মৃত্যুর কথা আমরা প্রতিদিন শুনি।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইরান,নৈতিকতা পুলিশ,বিক্ষোভ,নারী,যৌনাঙ্গ,গুলি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close