থাই উপকূলে ডুবছে রোহিঙ্গা নৌকা, যাত্রী দুই শতাধিক
থাইল্যান্ডের ফুকেট এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে আন্দামান সমুদ্রে ২০০-এর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা সাত দিনের বেশি সময় ধরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই নৌকায় থাকা শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন খাবার ও পানির অভাবে এরই মধ্যে মারা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি থাই সার্ভিস। নৌকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
ওই নৌকায় থাকা শরণার্থীরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে নৌকায় উঠেছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডের রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন একটি এক মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ভাসমান ওই নৌকায় শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নৌকায় অবস্থান করতে দেখা যায়।
থাইল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী সাইদ আলম বিবিসি থাইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অনেকের মরদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের খাবার শেষ হয়ে গেছে, নৌকায় পানি উঠছে। টেলিফোনে বিবিসি থাই সার্ভিসকে জানান সাইদ আলম।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে পালানোর ঘটনা এর আগে অনেকবার গণমাধ্যমে এসেছে। শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর এমন ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে।
নৌকায় থাকা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মানবাধিকার সংস্থা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া রয়টার্সকে জানান, দক্ষিণ থাইল্যান্ডের রানং উপকূলে থাকার সময় নৌকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেটিতে পানি ওঠা শুরু করে। নৌকার যাত্রীরা ক্রমাগত নৌকা থেকে পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করছেন। বিবিসি থাইকে রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী সাইদ আলম বলেন, কেউ এই নৌকাটির সাহায্য না করলে এটি দুই দিনের মধ্যে নৌকাটি ডুবে যাবে। নৌকাটি নভেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করে ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত নৌকায় অন্তত ৩০ জন মারা গেছেন। আরো ৬০-৭০ জন গুরুতর অসুস্থ। তাদের অধিকাংশই খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ক্রিস লেওয়া নৌকায় থাকা শরণার্থীদের বরাত দিয়ে রয়টার্সকে বলেন যে নৌকাটির যাত্রীরা দুই দিন আগে থাই নৌবাহিনীর একটি জাহাজ দেখে সাহায্যের আবেদন করলেও তারা এগিয়ে আসেনি। বিবিসি থাইকে একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সাইদ আলমও। সাইদ আলম বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে অন্তত চারটি নৌকা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার দিকে গিয়েছে, যার মধ্যে এই নৌকাটিও রয়েছে। এই চারটি নৌকায় অন্তত ৮০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিলেন।
থাইল্যান্ডের নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ম্যারিটাইম ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেন্টারের অঞ্চল-৩ এর একজন কর্মকর্তা বিবিসি থাই সার্ভিসকে নিশ্চিত করেছেন যে রোহিঙ্গা শরণার্থী বহনকারী এই নৌকাটি সম্পর্কে তারা অবগত আছেন। তবে এটি থাইল্যান্ডের উপকূলের ১০০ নটিক্যাল মাইলের বেশি দূরত্বে থাকায় তারা কোনো সহায়তা করতে অপারগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অঞ্চল-৩ এর একজন কর্মকর্তা বিবিসি থাইকে জানিয়েছেন, নৌকাটি থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমার বাইরে থাকায় তারা নৌকার যাত্রীদের আটক করতে বা খাদ্য সহায়তা দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন নৌকাটি এখন ভারতের সমুদ্রসীমায়। তবে ভারতের কোস্টগার্ডের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, নৌকাটি সম্পর্কে তারা অবগত রয়েছেন এবং নৌকাটি তাদের জলসীমায় অবস্থান করছে না। ওদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের থাইল্যান্ড মুখপাত্র নৌকাটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন যেন থাই কর্তৃপক্ষ যেন নৌকাটি উদ্ধার করে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
ইউএনএইচসিআর শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৯০০ জন সাগরপথে অবৈধভাবে সীমান্ত পার করেছে, যে সংখ্যাটি ২০২০ সালের তুলনায় ছয়গুণ বেশি। এই ১১ মাসে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে অন্তত ১১৯ জন।