প্রস্রাব দিয়ে চাষে ৩০ শতাংশ ফলন বাড়ে : গবেষণা
সারের বদলে মানুষের প্রস্রাব ব্যবহার করায় ফসলের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আফ্রিকার দেশ নাইজার প্রজাতন্ত্রে সার হিসেবে প্রস্রাবের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এই ফল পাওয়া গেছে বলে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মৃতপ্রায় ফসল পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কয়েকটি দেশের একদল বিজ্ঞানী খনিজ সমৃদ্ধ, কম খরচের এবং সহজলভ্য সার—মানুষের ‘প্রস্রাব’ ব্যবহারে ফসলের উৎপাদনে চমকপ্রদ এই ফল পান।
নাইজার, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির গবেষকদের একটি দল পার্ল মিলেট প্যানিকল নামের এক ধরনের শস্যের ফলন বাড়াতে জৈব সারের সঙ্গে মানুষের প্রস্রাবের মিশ্রণ ঘটিয়ে ‘ওগা’ নামের এই সার তৈরি করেন। পরে গ্রীষ্মকালীন পার্ল মিলেট চাষে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেন তারা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের প্রস্রাবে ইউরিয়া, সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো একাধিক উপাদান রয়েছে। যা সঠিকভাবে ব্যবহারে ভালো ফল মিলতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে গবেষকদের ওই দল পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদে মানুষের প্রস্রাবের ব্যবহার শুরু করেন।
গবেষকরা দেখেছেন, যেসব জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে, তার তুলনায় মানুষের প্রস্রাব ব্যবহার করা জমিতে ফসলের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নতুন এই সার ব্যবহারকারী কৃষকদের মতে, এর একমাত্র খারাপ দিক হল দুর্গন্ধ। নাইজারের একজন কৃষক বলেছেন, একমাত্র সমস্যা হল ‘ওগা’ সারের দুর্গন্ধ ততটা ভালো নয়।
নাক এবং মুখ কাপড়ে ঢেকে এই সার ব্যবহারের সময় তিনি বলেন, ‘যখনই আমি জমিতে প্রস্রাব ব্যবহার করি, তখনই নিজের নাক-মুখ ঢেকে রাখি। তবে এটি বড় কোনও সমস্যা নয়।’
ফসলে সার হিসেবে মানুষের প্রস্রাব ব্যবহার করার এই ধারণা অদ্ভূত শোনালেও হাজার বছর আগে পুষ্টির কারণে তা ব্যবহার হয়েছে। মানুষের প্রস্রাবে ফসফরাস, নাইট্রোজেন এবং পটাসিয়াম রয়েছে, যা বাজারে পাওয়া বাণিজ্যিক সারেও পাওয়া যায়।
নাইজারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের বিজ্ঞানী হান্নাতো মুসার নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটি প্রাচীন সভ্যতায় আবাদি জমিতে মানুষের প্রস্রাব ব্যবহারের এই চর্চায় আধুনিক কিছু কৌশল যুক্ত করেছে।
বিজ্ঞানীরা ‘প্রস্রাব’ শব্দটি ঘিরে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে এর নাম পরিবর্তন করে ‘ওগা’ রেখে কাজ শুরু করেছিলেন। পরীক্ষার পরবর্তী অংশে দেশটির বিভিন্ন এলাকার খামার দু’টি ভাগে বিভক্ত করেন তারা। এর একটিতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিক সার এবং অন্যটিতে ‘ওগা’ ব্যবহার করা হয়।
যেসব দেশে প্রস্রাব-ভিত্তিক সার পরীক্ষা করা হয়েছে, সেসব দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে। চীন, ফ্রান্স এবং উগান্ডায় এই সারের গ্রহণযোগ্যতার হার অনেক বেশি হলেও পর্তুগাল এবং জর্ডানে তা কম। প্রস্রাব সাধারণত কোনও রোগের প্রধান বাহক নয়। যে কারণে কৃষিতে ব্যবহারের জন্য এর ভারী প্রক্রিয়াকরণেরও প্রয়োজন হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই সার প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে এবং এটি পাস্তুরিত করাও সম্ভব।
গবেষকরা বলেছেন, সংগ্রহ করার পর প্রস্রাব ক্ষেতে নিয়ে যেতে হবে। তবে এই পদ্ধতি এখনও ব্যয়বহুল। বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস এবং ঘনীভূত করা অথবা এমনকি ডিহাইড্রেট করাও সম্ভব।
সূত্র : ডেইলি মেইল।