মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন দ্বৈত নীতি
সমালোচনার মুখে বাইডেন প্রশাসন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেল বাণিজ্য এবং মানবাধিকার ইস্যু—এই দুইয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত তেলকেই বেছে নিয়েছে। তাই আগামী মাসে সৌদি আরবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আসন্ন সফর অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।
অবশেষে সব ধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১৩ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, অধিকৃত অঞ্চল, এবং সৌদি আরব সফর করবেন বলে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সৌদির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে দেখা করতে জো বাইডেন সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজের এ ঘোষণার পর বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এমনকি জো বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিকের কিছু সদস্য তীব্র সমালোচনায় মেতে ওঠেন। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য অ্যাডাম শিফ বলেন, জো বাইডেনের সৌদি আরব ভ্রমণ করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে, যাতে তাকে কোনো স্বৈরাচারী সরকার, যাদের হাত সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে না হয়।
এ প্রসঙ্গে জো বাইডেন দাবি করেন, তিনি মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করতে সৌদি আরবে যাচ্ছেন না বরং একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে যাচ্ছেন।
সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৩৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারপর থেকে মার্কিন নেতারা সৌদি আরবের ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবের সঙ্গে সব সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এমনকি যখন ৯/১১-এর ভয়াবহ হামলায় মার্কিন কংগ্রেসের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ১৯ ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জন সৌদি নাগরিক ছিল। কিন্তু তখনও রিয়াদের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এমনকি এখনও জো বাইডেন প্রশাসন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি আরবের প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং ওয়াশিংটনের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হত্যার জন্য দায়ী করলেও বিন সালমানের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানবাধিকার ইস্যুতে তার স্পষ্ট বিরোধী অবস্থান ফুটে উঠেছে ।
জো বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সৌদি আরবকে তিনি একটি একঘরে এবং ঘৃণিত রাষ্ট্রে পরিণত করবেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে এবং কংগ্রেসের আগামী নির্বাচনেকে ঘিরেই সেখানকার রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটরা এখন উদ্বিগ্ন যে, আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা চলতে থাকলে তারা আসন্ন নির্বাচনে কেবল কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই হারাবে না এমনকি তারা হোয়াইট হাউসও হারাতে পারে। ফলে এসব পরিস্থিতি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বাইডেনের প্রচারের অবস্থানে দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জ্বালানি সরবরাহ, রাশিয়ার তেল উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদি বিষয় মানবাধিকার ইস্যুর চেয়ে বাইডেন প্রশাসনের কাছে ওইসব ইস্যু আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মার্কিন রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ইস্যুকে তারা সব সময় নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকায় কোন দল ক্ষমতায়, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। মূলত আমেরিকা মানবাধিকারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার কারণে সৌদি আরব ক্রমাগতভাবে কোনো বাধা ছাড়াই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। সূত্র : পার্সটুডে