মুসলিম নারীর মন্ত্রিত্ব হারানো নিয়ে ব্রিটেনে ইসলামভীতি বিতর্ক
মুসলিম হওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রিত্বের পদ হারাতে হয়েছে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি নুসরাত গনি (৪৯) নামের এক নারী এমপির।
তার অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন বরিস জনসনের কনসারভেটিভ পার্টিতে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স, এপি ও এএফপি’র।
বিতর্কের শুরু হয়েছিল সাবেক জুনিয়র পরিবহণ মন্ত্রী নুসরত ঘনির একটি বিস্ফোরক এক সাক্ষাৎকার থেকে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, 'মুসলিমনেস'-এর জন্যই তাকে মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করলেও দলীয় স্তরে কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি।
কনসারভেটিভ পার্টির একাধিক মন্ত্রী মুখ খুলেছেন, তদন্ত দাবি করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ জানিয়েছেন, নুসরত তার বন্ধু। তিনি যে অভিযোগ করছেন, তা রীতিমতো গুরুতর। তার উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করা। তাহলে তার কথাও নিশ্চয়ই শোনা হবে। আর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা দরকার।
শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহায়ি বলেছেন, নুসরত যা বলছেন, তানিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। কনসারভেটিভ পার্টিতে ইসলামভীতি বা বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যখন পার্টিগেট নিয়ে রীতিমতো চাপে, তখন আরেকটি বিতর্ক সামনে এল।
সানডে টাইমসকে নুসরত বলেছেন, ২০২০ সালে তাকে জুনিয়ার পরিবহণ মন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কনসারভেটিভ পার্টির হুইপ তাকে ডাউনিং স্ট্রিটে একটি বৈঠকে বলেছিলেন, তার মুসলিমনেস হলো এর কারণ। তাকে বলা হয়, তিনি মুসলিম নারী মন্ত্রী বলে তার সহকর্মীরা অস্বস্তি বোধ করছেন।
নুসরত জানিয়েছেন, এটাও বলা হয়, আমি দলের প্রতি পুরোপুরি বিশ্বস্ত নই। দলের বিরুদ্ধে ইসলামভীতির অভিযোগ আসার পর আমি দলের রক্ষায় সেভাবে উদ্যোগী হইনি।
তার দাবি, এটা স্পষ্ট যে, ১০ ডাউনিং স্ট্রিট আমাকে বিশ্বস্ত মনে করত। কিন্তু আমাকে সরিয়ে দেয়ার পর মনে হয়েছিল, আমার পেটে কেউ ঘুষি মেরেছে। নিজেকে ক্ষমতাহীন ও অপমানিত মনে হয়েছিল। আমি সহকর্মীদের ভয়ে এতদিন চুপ করে ছিলাম।
বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অফিস জানিয়েছে, জনসন এর আগে নুসরতের সঙ্গে দেখা করেছেন, তার অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানাতে বলেছেন।
চিফ হুইপ মার্ক স্পেনসর জানিয়েছেন, নুসরত তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি এরকম কোনো কথা নুসরতকে বলেননি।
বিচারমন্ত্রী ডমিনিক রাব স্কাই নিউজকে বলেছেন, তার দল ইসলামোফোবিয়া নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলে। তিনি বলেছেন, নুসরত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত হবে।
নুসরতের অভিযোগের আগে ক্ষমতাসীন দলের এমপি উইলিয়াম রাগ অভিযোগ করেছিলেন, দলের হুইপরা সরকারকে সমর্থন করার জন্য এমপি-দের ভয় দেখাচ্ছেন, ব্ল্যাকমেল করছেন। পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে বরিস জনসনকে যাতে ক্ষমতা হারাতে না হয়, সেজন্যই তারা এই কাজ করছেন।
পার্টিগেট নিয়ে জনসনের উপর প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে। দলের কিছু এমপি তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রিপোর্ট এসে যাবে। অনেক এমপি সেই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ এই রাজনৈতিক দলটির (কনজারভেটিভ পার্টি) বিরুদ্ধে আগে থেকেই ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের মে মাসেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিল দলটি।