reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

ইরাক যুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন কলিন পাওয়েল

ছবি : সংগৃহীত

একটি মিথ্যা বারবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়। গোয়েবলসের এ নীতির অনুসারী ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল। মিথ্যা তথ্য ও যুক্তি দিয়ে যুদ্ধ বাধিঁয়ে দেয়াই ছিল যার কাজ। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে আগ্রাসী সেই মন্ত্রী অবশেষে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করলেন।

তিনি ইরাক যুদ্ধের মাস্টার মাইন্ড বলেই খ্যাত। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ইরাকে আক্রমণ করার জন্য তার কাছে অন্তত ৭১০ টি যুক্তি আছে। বিশেষজ্ঞরা তার এ যুক্তির অসাড়তা বিশ্লেষণ করে বলেছেন, সাতশ দশটি নয় বরং ইরাকে যুদ্ধের জন্য একটিমাত্র যুক্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। আর তা হল ‘অয়েল’ বা তেল। উল্লেখ্য, ইংরেজি ৭১০ সংখ্যাকে উল্টো করে লিখলে ইংরেজি ‘অয়েল’ শব্দ বেরিয়ে আসে।

ইরাক যুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মার্কিন সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল কলিন পাওয়েল। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালাতে মিথ্যা গল্প ফাঁদেন তিনি। তিনি বুশ প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন তরান্বিত করতে পাওয়েলের ফাঁদা মিথ্যা যুক্তিই মূল কারণ বলে বিষেশজ্ঞদের ধারণা। সে কারণে কলিন পাওয়েল মার্কিন নাগরিকদের কাছে সুপার হিরো হলেওে ইরাকিদের কাছে খলনায়ক হিসেবে পরিচিত।

ইরাকে অভিযান পরিচালনার জন্য ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকে সামরিক অভিযান চালানোর সম্মতি আদায় করতে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল বৈঠকে বিভিন্ন ধরণের ডায়াগ্রাম ও ছবি তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ইরাক সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত রয়েছে। যা শুধু ইরাকিদের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই মারাত্মক হুমকি।

যদিও পাওয়েলের তখনকার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার উপায় ছিল না। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে ওই দাবি করেছিলেন। যদিও তার ওই দাবি নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য গ্রহণ করেনি। এ কারণে ইরাকে সামরিক অভিযানের সমর্থনে তোলা দ্বিতীয় প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রস্তাব পাস না হলেও বুশ ইরাকে আগ্রাসন চালাতে অবিচল ছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি না মিললেও শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেন সরকারকে উৎখাত করতে বিশাল অভিযান শুরু করে মার্কিন বাহিনী। এ বিষয়ে অনেককে মিত্র হিসেবে পাশে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেই কলিন পাওয়েল সোমবার (১৮ অক্টোবর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ তথ্য কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা’র।

তবে মারা যাওয়ার আগে ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইরাকে আগ্রাসন চালানোর বিষয়ে ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করার জন্য তিনি এখন অনুতপ্ত। এটাকে তার পেশাজীবনে ‘বড় কলঙ্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

উল্লেখ্য, কলিন পাওয়েল ১৯৮৯ পানামায় মার্কিন আগ্রাসনের তদারকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে কুয়েতে ইরাকি সেনাবাহিনীকে উৎখাত করতে মার্কিন অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মেয়াদের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন তিনি। এরপর জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের আমলে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রধান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

কলিন পাওয়েলের প্রয়াণের পর তাকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও সাহসী নায়ক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নেতার।। তাঁরা বলেছেন, কলিন পাওয়েল পেশাগত জীবনে যে জাতীয়তাবোধ ও অখণ্ডতা নিজের মধ্যে ধারণ করে গেছেন, সে জন্য মানুষকে তাকে সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবেন।

জানা যায়, ইরাকিরা পাওয়েলকে স্মরণ করবেন, তবে বীর হিসেবে নন, একজন মিথ্যুক হিসেবে। তারা মনে করেন, ইরাকে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ানো ব্যক্তিদের একজন পাওয়েল। হাজার হাজার ইরাকির জীবন তছনছ করে দেওয়ার জন্য তিনি দায়ী।

আলজাজিরা ও গার্ডিয়ান অবলম্বনেঃ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কলিন পাওয়েল,মাস্টারমাইন্ড
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close