reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ভারতজুড়ে আবারও কৃষক আন্দোলন, রেল-সড়ক পথে অবস্থান

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের করা তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে ‘বনধ’ পালন করছে কৃষি সংগঠনগুলো। এসব আইন কৃষি খাতকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন করে ফেলবে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টার ভারত বন্ধ পালন করছে কৃষকরা। উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দামের নিশ্চয়তাসহ একাধিক দাবিতে ৪০টি কৃষক সংগঠনের সম্মিলিত জোট সংযুক্ত কৃষক মোর্চার ডাকে চলছে এই ভারত বন্ধ। সকাল থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কংগ্রেস ও বাম দলগুলো ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এই বন্ধকে সমর্থন জানিয়েছে।

কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, বড় প্রাইভেট কর্পোরেশনের পক্ষে সরকারকে প্রবর্তিত আইন বাতিল করার জন্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি সম্পূর্ণ দেশব্যাপী ধর্মঘট নিশ্চিত করতে হাজার হাজার কৃষক বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, আমরা এটাও নিশ্চিত করব যে ধর্মঘট শান্তিপূর্ণ থাকে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবর্তিত আইনে, কৃষি খাতকে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেয় এবং কৃষকদের সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারের বাইরে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। যেখানে কৃষকদের ন্যূনতম মূল্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়। সরকার এর মতে, এর ফলে কৃষকদের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের করা ওই আইনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কৃষক রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে প্রধান মহাসড়কে অনশন করেছিল।

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার অভিমন্যু কোহার বলেন, মোদী সরকার ১০ মাস ধরে কৃষকদের কথা শুনছে না এবং বিক্ষোভ উপেক্ষা করছে। তাই আমরা 'ভারত বন্ধ' তথা সারা ভারত ধর্মঘটের আহ্বান দিয়েছি যাতে প্রতিটি গ্রুপ, শ্রেণি, তরুণ এবং বৃদ্ধ কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা বর্তমান সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়।

তিনি বলেন, সরকার দাবি করে যে বিক্ষোভ দুটি বা তিনটি বিরোধী শাসিত রাজ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমরা সারা দেশ থেকে সমর্থন পাচ্ছি, যা প্রমাণ করছে এটি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এবং আসাম থেকে গুজরাট পর্যন্ত একটি সর্বভারতীয় আন্দোলন।

কোহার আরও বলেন, এই বিক্ষোভ মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং কর্ণাটকসহ রাজ্যগুলিতেও সমর্থন পেয়েছে। এই মাসের শুরুর দিকে, সবচেয়ে বেশি জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে পাঁচ লাখেরও বেশি কৃষক একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন, যা এখনও পর্যন্ত প্রতিবাদ অভিযানে সবচেয়ে বড়।

ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং দেশটির ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ।

এদিকে কৃষক আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের সমালোচনা করেছেন ভারতের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং টোমার। তার মতে কৃষকদের নিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন। বিজেপিও সমালোচনা করেছে কৃষক আন্দোলনের। তাদের অভিযোগ, এই আন্দোলনের পেছনে বিদেশি মদদ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর আজকের দিনে তিনটি কৃষি বিল পাস হয় ভারতের জাতীয় সংসদে। এই বিলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম নির্ধারণে আইনি রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া হয়। বাতিল হয় বেশ কিছু পণ্যের অত্যাবশ্যকীয় তকমাও। গোটা দেশের কৃষকেরা গর্জে ওঠেন। দিল্লি ও হরিয়ানা সীমান্তে শুরু হয় কৃষকদের আন্দোলন। এএফপি/আলজাজিরা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিক্ষোভ,রেল-সড়ক পথ,কৃষক আন্দোলন,ভারতজুড়ে
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close