অতিরিক্ত কাজের চাপে বছরে মৃত্যু ১৯ লাখ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ গবেষণায় বিশ্বজুড়ে কর্মজীবী মানুষের মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের কর্ম-সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ ও অভিঘাত।
‘ডব্লিউএইচও/আইএলও জয়েন্ট-এস্টিমেটস অব ওয়ার্ক-রিলেটেড বার্ডেন অব ডিজিজ অ্যান্ড ইনজুরি, ২০০০-২০১৬’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, কর্ম-সম্পর্কিত বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্ট এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
সংস্থা দুটির গবেষণা অনুযায়ী, ৮১ শতাংশ মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায়ী ছিল অসংক্রামক নানা রোগ। মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে ছিল ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (৪ লাখ ৫০ হাজার), স্ট্রোক (৪ লাখ) এবং হৃদরোগ (৩ লাখ ৫০ হাজার)। কাজের সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে ১৯ শতাংশ (৩ লাখ ৬০ হাজার) মানুষের।
গবেষণায় ১৯টি পেশাগত ঝুঁকিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কর্মস্থলে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, হাঁপানি ও ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতি। শুধু মাত্র দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণেই স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার পেশাজীবী মারা যান। তবে নতুন এ গবেষণায় পেশাজীবীদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে। কর্মস্থলে বায়ু দূষণে গড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। নানা ধরনের গ্যাস, ধোঁয়া, শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণ প্রাণঘাতী পরিবেশের তৈরি করে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘কর্ম-সম্পর্কিত রোগ ও অভিঘাত- স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাপের মুখে ফেলে দেয়, উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে এবং পরিবারের আয়কে বিপর্যস্ত করতে পারে। তবে আশার কথা হলো, কর্মক্ষেত্রে রোগ ও অভিঘাতে মৃত্যুর এই হার ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১৪ শতাংশ কমেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. তেদ্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ‘চাকরি করে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটতে দেখাটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের এই গবেষণা বিশ্বের জন্য সতর্কবার্তা।’ পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আইএলও-এর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, ‘এই গবেষণা কর্ম-সম্পর্কিত রোগগুলোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় যা স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে সহায়ক। ফলে সরকার, মালিক, শ্রমিক সবাই কর্মস্থলে ঝুঁকি কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে।’সূত্র: রয়টার্স।
পিডিএসও/এসএমএস