reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ জুলাই, ২০২১

সাইমন ড্রিংয়ের জীবনাবসান

ফেসবুক প্রোফাইলে খুব বেশি তথ্য নেই। বাংলাদেশের কয়েকজন বন্ধু আছেন। কাভার ফটোতে যে ছবিটা তাতে লাল-সবুজের চিরচেনা গ্রামের দৃশ্য। কিংবদন্তি সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এসব রেখে ৭৬ বছর বয়সে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে কাজ করতে এসে অনেক হুমকি উপেক্ষা করে বিলাতি দৈনিক দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে সংবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

সাইমনের মৃত্যুর খবরটি মঙ্গলবার সকালে বিভিন্নভাবে জানতে শুরু করে বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু নিশ্চিত কোনো তথ্য মিলছিল না। বিবিসির সাবেক সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে সাইমন মারা যান। সুবীর ভৌমিক এখন ইস্টারলিংকের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর।

ইস্টারলিংকে সুবীর লিখেছেন, একটি অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়।

সাংবাদিক মশিউল আলমের একটি লেখা থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে সপ্তাহখানেকের জন্য ঢাকা এসে সাইমন ড্রিং ফিরে যাওয়ার কথা আর ভাবতেই পারেননি। পাকিস্তানের রাজনীতি ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আন্দোলন-সংগ্রাম সম্পর্কে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সখ্য গড়ে ওঠে অনেকের সঙ্গে। সর্বশেষ রাজনৈতিক ঘটনাবলি নিয়ে তিনি নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে থাকেন লন্ডনে।

২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় সাইমন ছোট্ট একটি মোটরভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। তারপর লেখেন ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন, ‘আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও সন্ত্রস্ত এক নগর। পাকিস্তানি সৈন্যদের ঠান্ডা মাথায় টানা ২৪ ঘণ্টা গোলাবর্ষণের পর এ নগরের...।’

ঢাকায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো প্রথম দফার গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রত্যক্ষ চিত্র উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৩০ মার্চ সেটা ছাপা হয়। এই প্রতিবেদন থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে পাকিস্তানি বাহিনীর সেদিনের বর্বরতার কথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সঞ্চারের প্রাথমিক মুহূর্ত ছিল সেটি।

৩০ মার্চ সাইমনকে লন্ডন চলে যেতে হয়। তারপর কলকাতায় আসেন নভেম্বরে; সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দিতেন লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ট্যাংকে চড়ে ময়মনসিংহ হয়ে প্রবেশ করেন মুক্ত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়।

সাইমন ড্রিং স্বাধীন বাংলাদেশে আবার এসেছিলেন ২০০০ সালে; এ দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি গড়ে তোলার প্রধান কারিগর হিসেবে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়। ২০০২ সালের অক্টোবরে সরকার সাইমন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দিলে তিনি চলে যান।

সাইমন ড্রিংয়ের জন্ম ইংল্যান্ডে, ১৯৪৫ সালে। তিনি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন ১৮ বছর বয়স থেকে। দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। শেষ বয়সে থিতু হন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল প্রকৃত সহযোদ্ধার।

সাইমন বাংলাদেশকে কতটা অনুভব করেন, সেটি তার বন্ধুরাও জানতেন। ফেসবুকের কাভার ফটোতে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ছবিটিতে একজনের মন্তব্যতেই সেটি পরিষ্কার, ‘বাংলাদেশকে খুব মিস করছো?’

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাইমন ড্রিং,মুক্তিযুদ্ধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close