reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ এপ্রিল, ২০২১

রোজার আগে ইসলামবিদ্বেষে উত্তপ্ত ফ্রান্স

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন ফ্রান্সের সরকার ইসলামবিদ্বেষী স্লোগান দিয়ে পশ্চিম ফ্রান্সের একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করার অর্থ দেশটির উপরই আক্রমণ। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন যিনি দেশটিতে মুসলিম বিরোধী কট্টর অবস্থানের জন্য সুপরিচিত, রোববার উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের রেন শহরের অ্যাভিসেনা ইসলামিক কালচারাল সেন্টার সফরকালে একথা জানান।

রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে ওই কেন্দ্রের দেয়ালে ইসলাবিদ্বেষী গ্রাফিতি আঁকা হয় এবং কেন্দ্রের চত্বর ভাঙচুর করা হয়।

দারমানিন জানান, তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সংহতি প্রদর্শন করতে সেখানে ভ্রমণ করেছেন। তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় কেন্দ্রটিতে মুসলিমবিরোধী যেসব লেখা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। ফ্রান্সে প্রার্থনা করার স্বাধীনতা মৌলিক স্বাধীনতাগুলোর একটি।’

ডেইলি সাবাহ জানায়, সমস্ত ফ্রান্স জুড়েই শহরগুলোতে এ সমস্ত জায়গায় হামলার ঘটনা বেড়েছে। ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব মুসলিম ওয়ারশিপ (সিএফসিএম) এর মতে, ফ্রান্সের নাট শহরের আররাহমা মসজিদে অগ্নিসংযোগের দুদিন পরে রেন শহরে এই ঘটনা ঘটলো। নাট শহরে মুসলিম সাংবাদিক নাদিয়া লাজৌনিকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, শনিবারই ফ্রান্সে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের প্রকাশ্যে হিজাব নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হয়েছে। আল জাজিরা জানায়, ফরাসি সরকার বলছে, 'বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী' এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের সেকুলার ব্যবস্থাকে গতিশীল করা। কিন্তু মুসলমান এবং সমালোচকরা বলছেন, মূলত দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতেই ফ্রান্স সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

ফ্রান্সের মুসলিম তরুণীরা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিম, অমুসলিম নারীরাও এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে সরকার এবং মুসলমানদের মাঝে উত্তেজনার ঘটনা নতুন নয়। বরং প্রায় নিয়মিতই বলা চলে। গেলো বছর অক্টোবরে করোনা মহামারির মধ্যেই মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের জেরে এক মুসলিম উগ্রবাদী কর্তৃক স্যামুয়েল পেটি নামে একজন ইতিহাস শিক্ষক হত্যার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ফ্রান্স। সাধারণ মুসলিমরাও হয়ে পড়েন আতংকিত। পেটি হত্যার পর অন্তত ৫০টি মসজিদ ও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ অভিযান চালায় ফ্রান্সের নিরাপত্তা বাহিনী। চলমান উত্তেজনার মাঝেই মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তার ওই ঘোষণায় মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ইসলামের প্রতি এমন মানসিকতার জন্য ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। অনেক মুসলিম দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। করোনা মহামারির সময় নাজুক অর্থনীতির মাঝে ওই বয়কটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনায় আরব দেশগুলোর প্রতি পণ্য বয়কট বন্ধের অনুরোধ জানায় ফ্রান্স। মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের মধ্যেই এক সাক্ষাৎকারে দৃশ্যত কিছুটা নমনীয় হতে দেখা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে। এরপরই 'উগ্রপন্থী ইসলাম'কে দমন করতে একটি বিল পাস করে ফ্রান্সের মন্ত্রিসভা। ওই আইনটিতে হোম-স্কুলিংয়ের নিয়ম কানুন এবং হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য রুখতে কঠোরতা আরোপ করার কথা বলা হয়। ফ্রান্সের ভেতরে-বাইরে অনেক সমালোচক ফ্রান্স সরকারের সমালোচনা করেন এই বলে যে ধর্মকে টার্গেট করতেই এই আইন ব্যবহার করা হবে।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উত্তপ্ত ফ্রান্স,ইসলামবিদ্বেষ,রোজা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close