reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

মিয়ানমারে স্টান গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ও গুলিবর্ষণে ১৮ জনের প্রাণহানি

তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে আসা মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচারে স্টান গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ও গুলিবর্ষণে আরও অন্তত ১৮ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশজুড়ে এই বিক্ষোভে একদিনে সর্বাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে রোববার।

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে মিয়ানমার পুলিশের গুলিতে এই প্রাণহানি দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয় এবং দাওয়েইয়ে ঘটেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বিক্ষোভ থেকে সাংবাদিকসহ ৮ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।

দেশটির একজন রাজনীতিক এবং একজন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের ব্যাপক দমন-পীড়নে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তাদের কাছে বিশ্বস্ত তথ্য আছে — রোববার অন্তত ১৮ জন নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন প্রান্তে স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গুলিবষর্ণ করেছে পুলিশ। স্থানীয় মানবাধিকার এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন, রোববার সকালের দিকে ইয়াঙ্গুনে শিক্ষকদের বিক্ষোভে স্টান গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এতে অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে।

পুলিশি সহিংসতা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। নায়ান উইন শিন নামের এক বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে বলেন, তারা যদি আমাদের দমানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমরা আরও জেগে উঠবো। আমাদের ওপর হামলা হলে তা প্রতিরোধ করবো। আমরা সেনাবাহিনীর বুটের কাছে নত হবো না।

দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাজা গুলি, টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। সেখানে পুলিশের হামলায় অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন।

মান্দালয়েও ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে মিয়ানমার পুলিশ। শহরটিতে বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দিতে জলকামান এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে একজনের প্রাণ গেছে। থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের নির্বাসিত নাগরিকদের পরিচালিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি বলছে, দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক চড়াও হয়েছে পুলিশ। পুলিশের তাণ্ডবে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহতও হয়েছেন।

স্থানীয় রাজনীতিক কিয়াও মিন টিকে রয়টার্সকে বলেছেন, মায়েক, বাগো এবং পোকোকু শহরেও প্রাণহানির খবর এসেছে।গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে অস্থিতিশীল রয়েছে মিয়ানমার।

অভ্যুত্থানের পর দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের আটক করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে এনএলডি জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ করে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই জান্তা সরকার। প্রায় ৫০ বছরের সেনাশাসনের পর দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রার কয়েক বছর যেতে না যেতেই আবারও সামরিক জান্তা ক্ষমতায় ফিরে আসায় লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন।

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটির নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সেনা জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মং বো এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মিয়ানমার একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। রোববারের বিক্ষোভে হতাহতের বিষয়ে মিয়ানমার পুলিশ এবং সামরিক সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে টেলিফোন করলেও সাড়া পায়নি রয়টার্স।

এদিকে, পুলিশি সহিংসতার বিষয়ে দু’দিন আগে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেছেন, কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমনে সর্বনিম্ন বলপ্রয়োগ করছে। দেশটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২১ জনের প্রাণহানি ঘটল। সহিংসতায় পুলিশের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মিয়ানমার,স্টান গ্রেনেড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close