পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অভিযুক্ত ৩২ জনই বেকসুর খালাস

বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা

পরিকল্পিতভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়নি, লখনউয়ে বিশেষ সিবিআই আদালতে জানিয়ে দিলেন বিচারক। তাই লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলি মনোহর যোশী, উমা ভারতীসহ ৩২ জনকেই বেকসুর খালাস করা হয়েছে।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকরা ভেঙে ফেলেন ষোড়শ শতকে তৈরি বাবরি মসজিদ। তাদের দাবি, রামের জন্মস্থানে তৈরি হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছে ওই মসজিদ। এই মসজিদ ভাঙায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ৪৮ জনের নামে ১৯৯৩ সালে চার্জশিট দায়ের করে সিবিআই। সেই তালিকায় রয়েছে প্রয়াত শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে, প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলি মনোহর যোশী, উমা ভারতীর নাম।

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করল আদালত। বাবরি ধ্বংস মামলায় ৩২ জনকেই বেকসুর খালাস করা হলো। বাবরি মামলায় দু-হাজার পাতার রায় পড়ে শুনিয়েছেন বিচারপতি বীরেন্দ্র যাদব। ভিডিও কনফারেন্সে হাজিরা উমা ভারতীর, রয়েছেন আডবাণী, মুরলিও। আদালতে উপস্থিত বিনয় কাটিয়ার, চম্পত রাই, জয় ভগবান গোয়েলসহ ২৬ জন।

লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে সেই মামলারই রায় ঘোষণায় ৩২ জন জীবিত অভিযুক্তকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু বয়সের কারণে ছিলেন না ৯২ বছরের আডবানি এবং ৮৬ বছরের যোশী। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংও করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাই তারা দু‌জনও উপস্থিত ছিলেন না।

উমা ভারতীয় যদিও আগেই জানিয়েছেন, এই মামলায় তার জেল হলে সেটা আশীর্বাদ হবে। বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, তিনি জামিনের আবেদন করবেন না। ২৮ বছর আগে যেদিন বাবরি ধ্বংস হয়, সেদিন ঘটনাস্থলের অদূরে মঞ্চে ছিলেন আডবানি, যোশী, উমা ভারতীরা। অভিযোগ, তারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে মসজিদ ভাঙার প্ররোচনা দিয়েছিলেন। তাতেই করসেবকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাচীন ওই মসজিদ ভাঙেন। তার জেরে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। মারা যান প্রায় ৩০০০ জন। ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে আমূল পরিবর্তন আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, রায় কোনও একটি গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলে কিছু লোকজন আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে।

সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মতো পরিস্থিতিও তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে বলে সতর্কবার্তায় লেখা হয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকদের হাতুড়ির ঘায়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে প্ররোচনা দিয়েছিলেন আদবানি, যোশী, উমারা। ১৯৯২ সালের এই ঘটনায় শুরুর দিকে দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছিল। প্রথমটি অজ্ঞাতপরিচয় করসেবকদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টি আদবানিদের বিরুদ্ধে। পরে একে একে ৪৫টি এফআইআর রুজু হয় এই মামলায়। বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য রায়বেরিলিতে তৈরি হয় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। তারপর থেকেই মামলা চলছে। ২০০১-এ আদবানি, যোশীদের অভিযোগ থেকে রেহাই দিয়ে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু, তারপরই ঘটনায় নতুন মোড় এনে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, হাইকোর্টের এই রায় ভুল। আদবানিরা অভিযুক্তই। আদালত এমনও বলে যে, বাবরি ধ্বংসের এই ঘটনা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মামলার নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয় আদালত। সেই সময়সীমা অবশ্য বেশ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরই অযোধ্যা মামলার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিতর্কিত যে জমিতে বাবরি মসজিদ ছিল, সেটিকে রামজন্মভূমি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর আগস্টে রামমন্দিরের ভূমিপূজনও হয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাবরি মসজিদ,রায়,বিজেপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close