‘করোনায় মানুষ, মনুষ্যত্ব এবং ক্ষুধা’ -আরিফ হাসান প্রধান
করোনায় মানুষ, মনুষ্যত্ব এবং ক্ষুধা
আরিফ হাসান প্রধান
করোনা দেখেও মানুষ হলিনা মানুষ হবি কবে?
তোদের চুরি লুট এ ধরনীতে ইতিহাস হয়ে রবে।
করোনা পারেনি করতে মানুষ, আর কবে বল ফিরবে রে হুস!
খয়রাতের চাল করিস লুট, নাই কিরে তোর মরণের ভয়?
ভেবে দেখ একবার, অসহায়রা কিভাবে ক্ষুধার দুঃসহ জ্বালা সয়।
বাধ্য হয়ে যারা ক্ষুধার কষ্টে হয়েছে ঘরের বাহির,
তাদের কষ্ট না বুঝে তুই ক্ষমতা করিস জাহির!
ঘরে খাবার নেই, কি খাবে?
বাবা-মা স্ত্রী সন্তানেরা উপোস,
প্রতিবেশীরও নিলিনা খবর রয়ে তুই বেহুশ!
ক্ষুধার জ্বালায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছে ধারে ধারে,
গলেনি মন একটিবারও, তাড়িয়েছিস বারে বারে।
কত সন্মানি আর মধ্যবিত্ত সংকটে পরে করেছে ধার দেনা,
ভুল হয়নি তাদের বেলায় তোর সুদের হিসেব ঠিকঠাক আছে জানা।
শিক্ষকেরা কত কষ্টে করছে জীবনযাপন,
তাদেরও তুই খোঁজ নিলিনা তারাই সবার আপন।
মানুষ গড়ার কারিগরের দিন কাটছে খুবই মানবেতর,
মানুষের মনগুলো কি সব হয়ে গেলো পাথর?
ক্ষুদা নিয়ে রাস্তায় ঘুরছে কত দুস্থ; রাখিস না তার খোঁজ,
না নিতে খোঁজ তাল-বাহানায় ধরিস কত দোষ!
আকাশ ভেঙে পড়েছে মাথায়, নেই খাবার সন্তানেরা উপোষ!
কি করবে তারা ? জন্মেছে গরিব এটাই দোষ!
পেটে ক্ষুধা নিয়ে ছটফটিয়ে কষ্টে কাটে রাত,
পুলাও কোরমা চায় না তারা, দাও একমুঠো ডাল ভাত।
কাজ পেলে চুলা জ্বলে না পেলে বন্ধ,
লকডাউনে সম্বলহীনরা চোখ থাকিতেও অন্ধ।
কাজ নেই তবুও অনাহারী স্ত্রী সন্তান পথ চেয়ে থাকে বসে,
অভাবের বোঝা মাথায় নিয়ে পায়নি কাওকে পাশে,
গরীবের ব্যথা বুঝে নাতো কেও, অনেকেই দেখে হাসে।
দেখেছি অনেক, শিখেছি কত কিছু-
অট্টালিকায় বসবাসেও মনটা যে তর নিচু।
সময় এসেছে সকল বিভেদের প্রাচীর ভাঙতে হবে এবার,
সম অধিকারে এ ধরনীতে বাচঁতে হবে সবার।
উচু নিচু ভাল মন্দ বুঝিনা'ত কিছু,
ক্ষুদার জ্বালা বড় কষ্ট ছাড়েনা তা পিছু।
মনুষ্যত্ব নেই, তুই মানুষ নামের পশু,
সবকিছু জেনে সন্তানের ক্ষুধায় নির্লজ্জ হয়ে ছুটি তোদের পিছু।
তোদের কাছে রয়েছে কিন্তু গরিবেরই হক,
আদায় না করে তোরা হয়েছিস ভণ্ড প্রতারক।
করিস লুট, লাগিয়ে মুখোশ অনাহারির খাবার, কে বলে মানুষ!
তুই নিকৃষ্ট জানোয়ার। কত চুলায় জ্বলেনি আগুন নিয়েছিস কি খোঁজ?
অথচ তাদের ত্রাণের আশায় ঘুরিয়েছিস রোজ!
কত নামি দামি বিত্তশালীরা চলে গেল করোনা আক্রান্ত হয়ে,
আমরা গরীব বড় করোনা ক্ষুধার জ্বালা পেটে বেড়ায় বয়ে।
কত ধনীরা অর্থ দিয়েও বাঁচাতে পারেনি জীবন,
কাছে যায়নি কেও ভয়ে, অথচ শুভাকাঙ্ক্ষী আত্নীয় রয়েছে কতশত জন।
মৃত্যুশযায় দেখতে পায়নি স্ত্রী-সন্তানের মুখ,
সারাজীবন কষ্ট করে পায়নি শেষ বিদায়ে সুখ!
বাবা ছোয়নি সন্তানের লাশ, সন্তান ধরেনি বাবার,
এতকিছুতেও শিক্ষা হয়নি তোর, সব ভুলে গড়ছিস শুধু সম্পদেরই পাহাড়!
কেউ করেছিস টিকার ব্যবসা কেউ বা আবার টেস্ট?
তোরাই আবার পেয়ে যাচ্ছিস কত পদক,
আর নামি দামি যত ক্রেস্ট!
মাস্ক পিপিই স্যানিটাইজার বাদ দিসনি তোরা,
পুরাতন মাস্ক বিক্রি করেও খেয়েছিলি ধরা!
অর্থ সম্পদ হয়েছে অনেক, কিন্তু মানুষ হসনি তোরা।
স্বাস্থ্য আর নিত্য পন্যের বাড়িয়েছিস দাম,
তোদের কারনে সমাজে আজ মানুষের বদনাম।
সময় আছে এখনো তোরা মানুষের কাতারে আয়, মৃত্যু নয়,
করোনা হলেই বুঝবিরে তুই দুনিয়াতে কেহ নাই।
অসুখ হলেই রাখেনা খোঁজ মৃত্যুর পর কি হবে?
কার জন্য কি করে যাচ্ছিস? সবই বৃথা পরে রবে।
করোনা হলে ছেড়ে চলে যায়, থাকেনা কেউ আপন,
মরার পর হয়ে যায় লাশ, ঘরে নেয়না কেউ তাড়াতাড়ি করে দাফন।
কাড়ি কাড়ি কত টাকা নিয়েও পায়নি অক্সিজেন,
এত কিছু দেখেও কেন আসেনা তোর কবরেরই ধ্যান!
বিবেকের মাথা মগজ নাড়ীভুঁড়ি খেয়েছিস তুই, মানুষ নেই তুই আর-
সময় থাকতে তওবা করে চুরি লুটপাট অনিয়ম দুর্নীতি ছাড়।
মাটি খুরে চাল রেখেছিস খাটের নিচে তেল,
শিক্ষা হবেকি তোর জরিমানা দিয়ে কি'বা খেটে জেল!
পাপ করিলে শাস্তি পাবিই হিসাব টা খুব সোজা,
এক জায়গায় পার পেলেও অন্যখানে সাজা।
এ দুনিয়ায় পার পেলেও ওপারে নাই রেহাই,
কাজ হবেনা ঘুষে, চলবেনা কোন দোহাই।
ধনী গরীব নেই সেখানে নেইকো রাজা প্রজা,
পাপ করিলে শাস্তি দিবেন শেষ বিচারের রাজা।
হাত পা আর মাথা থাকলেই হওয়া যায়না মানুষ,
মৃত্যু ভুলে মহামারীতেও খেয়েছিস কত ঘোষ!
ধনীরা দিয়েছে বকশিস,গরীব যায়নি বাদ,
তাদের রক্ত শোষণে তোরা ফেলিস কত ফাঁদ!
ভিক্ষুক পায়না তোদের কাছে ঘোষের টাকা ছাড়,
একবার ভেবে দেখ নিরবে, মানুষ রয়েছিস কি আর!
প্রনোদনার টাকা নিতেও খেয়েছিস ঘুষ!
কি মনে হয় তোর? এখনও কি মানুষের কাতারে আছিস?
এ জগতে আর কোন দিন ফিরবে কি তোর হুশ?
যখন মানুষ কাঁদে ক্ষুদার জালায় পকেটে নাই টাকা,
চাহিদা পেলে মজুদ করিস খাদ্য, তোদের মনুষ্যত্ব কি কালো কাপড়ে ঢাকা?
আবার সুযোগ বুজে কাজ করিয়ে মজুরি দিসনি ন্যায্য,
হক মেরে পেটে লাথি দিয়ে তুই গড়বিরে সাম্রাজ্য।
এসব কাজের ফল পাবি তুই, যেদিন করবে সবাই ত্যাজ্য।
মজুরি কম নিয়েও ফাঁকি দেয়নি কাজ,
সয়ে গেছে নিরবে গরীব হলেও মানুষ তারা,
তারাই মাথার তাজ, কিন্তু হলোনা তোর লাজ।
কত সমাজ পতিরা গরীবকে দেখিয়ে টাকা নিয়েছিস তুলে,
সিকি ভাগ দান করে বাকিটা লুট করেছিস কত কৌশলে!
কুকুর যেমন কামড় দিলে মানুষ দেয়না উল্টো,
সমাজে কিছু মানুষ আছে কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট।
মানুষ নয় তুই সমাজের কিট জাতির কুলাঙ্গার,
তোর থেকে ভালো বনের পশু, অনেক হিংস্র জানোয়ার।
ক্ষুদার্তদের ক্ষুদা নিয়েও তোরা করেছিস কত ব্যবসা!
মজলুমের অভিসাপে তোর কষ্টে কাটবে দিন,কাটবেনা দূর্দষা।
সুনাম খ্যাতি টাকা পয়সা হবে বাড়ি গাড়ি,
সুখী হবিনা লাঞ্চিত হয়ে এ দুনিয়া যাবি ছাড়ি।
সময় নাই তওবা করে ফিরে আয় ন্যায়ের পথে,
ক্ষুধা মুক্ত সমাজ গড়তে কাধে কাধ মিলিয়ে চলি এ সুন্দর পৃথিবীতে।
একটি প্যাকেট খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে কত সময় করেছে পার!
তবুও পাইনি একটি পেকেট, পেটে ক্ষুধা ছিলো তার।
ভেবে দেখ একটিবার তাদেরও পেটে খাবার দিতে হয়,
দিনের পর দিন ক্ষুধার জ্বালা তারা কিভাবে সয়?
তাদের জায়গায় একবার দাঁড়িয়ে দেখ, বাস্তবতা কত কঠিন?
টের পাবি তুই কত ঘন্টায় হয় রাত, আর কত ঘন্টায় দিন।
কত পথশিশু ক্ষুদার্থ হয়ে রয়েছে দরজায় দাঁড়িয়ে,
খাবার দিসনি ভালো কথা করে অপমান দিয়েছিস তাড়িয়ে।
বুঝবি কিরে তুই অনাহারী সন্তানের কষ্ট?
বুঝার বোধশক্তি হারিয়েছে তোর ভিতরে সব নষ্ট।
কত কারখানায় দেয়নি বেতন সময়মতো করোনার বাহানায়,
শ্রমিকেরা রুম ভাড়া আর দোকান বাকী নিয়ে হয়ে অসহায়,
দিনের পর দিন পার করেছে লজ্জা হতাশায়।
যাদের ঘামের বিনিময়ে তুই মালিক হয়েছিস,
তাদের পেটের ক্ষুধা নিয়েও ছলনা করেছিস!
কত কারখানায় বেতনের দাবিতে করেছে বিক্ষোভ!
তারা তো চেয়েছে ন্যায্য পাওনা পারিশ্রমিক,
তারা তো করুনা চায়নি, কি মনে করিস? তারা কি ভিক্ষুক?
তুই স্বীকার না করেলও করবে কারখানার ইট পাথর আর পন্য,
তাদের ত্যাগেই মালিক মহাজন তুই, তাদের শ্রমেই পৃথিবী হয়েছে ধন্য।
অথচ তোদের চোখে মানুষ নয় তারা, ভাবিস বাজারেরই পন্য।
সোনা মুক্তার পাহাড় দিলেও ভরবেনা পেট চাইবি আরও কিছু,
সময় থাকতে অন্যায় লোভ লালসা ছাড়, ছুটিসনা শুভঙ্করের পিছু।
এ দুনিয়ার সব কিছু পেলে চাইবিরে তুই আরও,
একমাত্র আমল ছাড়া অন্যকিছু সঙ্গে যাবেনা কারও।
চাই চাই আরও চাই তোর এ হয়েছে স্বভাব-
জীবদ্দশায় কোন দিন তোর মিটবেনারে অভাব।
কবিতার একটি কথাও তোমার সাথে যদি মিলে যায়,
ক্ষমা চেয়ে জাতীর কাছে, পড়ে যাও আল্লাহর কুদরতি পায়।
পিডিএসও/এসএমএস