আল-আমিন মিয়া, গণমাধ্যমকর্মী

  ০৮ জুলাই, ২০২১

লকডাউনে চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ করুন

লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ-বিজিবি-ম্যাজিস্ট্রেট টইল দিচ্ছে। তাদের দেখে দোকান শাটার বন্ধ করে যে যার মতো ছুটছে। নয়তো ধরতে পারলেই দিবে সাজা-না হলে ধরবে জরিমানা। সে ভয়েই সবাই কাঁপছে। তাই তো দোকান-শাটার বন্ধ করে সবাই যার যার মতো ছুটছে।

ছোটবেলায় মায়ের মুখ থেকে প্রায়ই যে গল্প শুনতাম। এক সময় গ্রাম-গঞ্জের জনপ্রিয় খেলা ছিল চোর-পুলিশ খেলা। নব্বই বা তার আগের দশকগুলোতে যাদের জন্ম এবং যাদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামীণ আবহে, তাদের কাছে চোর-পুলিশ খেলাটা অনেক পরিচিত এবং জনপ্রিয়। এ খেলায় কোনো একটি ছেলে বা মেয়ে (মাঝেমধ্যে দলবদ্ধভাবেও হয়) পুলিশ পরিচয় পায় আর অন্য দলে চোর থাকে। চোরেরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী যত দূরভেদ্য জায়গায় পালানো সম্ভব, তারা তা করে। অপর দিকে পুলিশ তাদের মেধা ও পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে তাদের খুঁজে বের করে। এর মধ্যে আরও একটা নিয়ম ছিল, যদি কোনো চোর দলের সদস্য পুলিশের অজান্তেই তাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে, তবে সে আবার নতুন করে পুলিশ সেজে সবাইকে খুঁজে বেড়াবে। কিছু দুষ্টু প্রকৃতির চোর ছিল, যারা পালানোর নাম করে দল বেঁধে পালিয়ে খেলার স্থান থেকে যার যার বাড়ি চলে যেত। বেচারা পুলিশ হন্যে হয়ে কাউকে খুঁজে না পেয়ে রাগে ক্ষোভে বাধ্য হয়ে খেলার ইতি টানত।

ঠিক তেমনি যেনো এই করোনা মহামারিতেও আমাদের চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ হয়নি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্থানীয় প্রশাসন একটি সময় ক্লান্ত হয়ে ইতি টানবে। এমনই মনে হয় বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতি দেখলে। ঢাকা শহরে যদিও কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করা অনেকটা সম্ভব। কিন্তু মফস্বলে অধিক কঠিন। এখানে এক দিক দিয়ে প্রশাসন জেল-জরিমানা করে চলে যাওয়ার সাথে সাথেই অন্য দিক দিয়ে যেই সেই অবস্থা। দেশ তথা সারা বিশ্বে যখন চলমান মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে থমকে গেছে। যেখানে প্রতিদিনই এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বাদ যাচ্ছে না কেউ। সেখানে লকডাউন মানার ক্ষেত্রে আমাদের এই চোর-পুলিশ খেলা এখনো যদি বন্ধ না করি। তবে এই করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নিজের পরিবারসহ সমাজের সবাই আক্রান্ত হওয়া মুহূর্তটুকু দেখার সময় আর বেশি দূরে নয়। মহামারি এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে প্রথম ধাপে ৭ দিন ও পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৭ দিন মেয়াদ বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পযর্ন্ত সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের বিভিন্ন বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন করতে অন্যান্য জেলা ও উপজেলাগুলোর মতো নরসিংদীর পলাশ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা আফসানা (পিএএ), উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম ও পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশ-প্রশাসনের বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত মাঠে কাজ করলেও বাস্তবে আমরা নিজেরা সহযোগিতা না করলে বা সচেতন না হলে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব নয়। তাই, আসুন চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ করে আমরা নিজেরা সচেতন হয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করে নিজে বাঁচি ও সমাজকে বাঁচাই। সবার ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা ও সচেতনতায়ই সম্ভব হবে এই মহামারি সংকট কাটিয়ে উঠতে।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লকডাউন,করোনাভাইরাস,মহামারি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close