এম এ মাসুদ, গণমাধ্যমকর্মী

  ০৫ এপ্রিল, ২০২১

তরমুজ চাষে সোনা হয়ে উঠুক সুন্দরগঞ্জের তপ্ত বালুচর

তরমুজের ইংরেজি প্রতিশব্দ watermelon. ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ফলটি খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় পিপাসা মেটাতে তরমুজের রয়েছে বেশ চাহিদা। এতে রয়েছে ৯২ শতাংশ পানি, ৬ শতাংশ চিনি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে ২ শতাংশ। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ তরমুজ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চাষ হলেও এখন তা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও চাষ হচ্ছে।

তিস্তা বিধৌত এ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়নে রয়েছে ছোট বড় অনেক চর। বর্ষাকালে প্লাবিত হলেও শুকনো মৌসুমে তা রুপান্তরিত হয় ধু ধু বালুচরে, ঠিক যেন তপ্ত মরুভূমি। সেই বালুচরে বিভিন্ন ফসল ফললেও ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তরমুজ চাষে ঝুঁকি নিয়েছেন বেলকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে কৃষক গোলজার হোসেন।

বেলকা বাজার থেকে সোজা উত্তর দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে দুর্গম চরের ফুটন্ত বালুতে করেছেন তরমুজ চাষ। নিয়েছেন অন্যান্য কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা প্রতি বিঘা জমি কন্ট্রাক্ট। সবমিলে প্রায় একশ একর জমির ক্ষেতে নিয়মিত কাজ করছেন ২২ জন শ্রমিক।

দুটি প্রজেক্টে তিনি আশা করছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মন তরমুজ ফলানোর। ‘বৃষ্টি হলে উৎপাদন আরো বাড়তো’ বলছিলেন কৃষক গোলজার। ইতোমধ্যে ২ হাজার মন তরমৃুজ বাজারজাত করেছেন তিনি, আয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। প্রতিটির ওজন ৪ কেজি থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত হওয়ায় আরও ২ হাজার মন তরমুজ উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করছেন ওই কৃষক। বর্তমান বাজার দর মন প্রতি ৭০০ টাকা ধরলে আরও ১২ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন তিনি। তরমুজের ক্ষেতের দিকে তাকালে দেখা যায়, শুধু তরমুজ আর তরমুজ। এ যেন তরমুজের এক মেলা!

তরমুজ চাষের খবর পেয়ে দেখতে আসছেন বিভিন্ন বয়সী নরনারী এ দুর্গম চরাঞ্চলে। স্বাদ ও রসে টইটুম্বুর এবং লাল টসটসে হওয়ায় তা খেতে বা কিনতে চাওয়ায় বিরক্তির ছাপ যেন চোখে মুখে ফুটে উঠছে ওই কৃষকের!

কৃষি বিভাগের প্রতি অনুযোগ প্রকাশ করে ওই কৃষক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কোনো সহযোগিতা পাইনি, পেলে আরও ভালো করতে পারতাম। বড় কর্মকর্তা না আসলেও এসেছেন বিএস (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা)। তবে তাকে মোটরসাইকেল দিয়ে আমাকেই আনতে হতো, বলছিলেন গোলজার হোসেন।

কর্মরত অপর এক কৃষক জানান, বিএস কেটা? তাও জানি না, চিনিও না।

সে যাই হোক, ফুটন্ত এমন বালুচরে তরমুজ চাষ করে যেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক গোলজার হোসেন। হচ্ছেন নিজে স্বাবলম্বী, কাজ করার সুযোগ পেয়ে দু'মুঠো খেতে পাচ্ছেন কর্মরত শ্রমিকরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় সোনা হয়ে উঠুক তপ্ত বালুচর। তাদের পরামর্শ নিয়ে আগামীতে তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চলের ফুটন্ত বালুতে তরমৃুজ চাষ করে উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও যাতে কৃষক গোলজারের মতো স্বাবলম্বী হয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, সেই প্রত্যাশা সবার।

লেখক : প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তরমুজ চাষ,গ্রীষ্মকালীন ফল,সুন্দরগঞ্জ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close