মো. রাকিবুল হাসান

  ১৫ আগস্ট, ২০২০

রঙিন খামে ধুলোপড়া স্মৃতি

রাজধানীর অদূরে ৩২ একরের গণ বিশ্ববিদ্যালয় বছরজুড়ে মুখরিত থাকে বন্ধুত্বের আড্ডা আর গানে। নিন্মমধ্যবিত্তের বাতিঘর মানে সুপরিচিত এই বিদ্যাপীঠ সাভার স্মৃতিসৌধের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠে ১৯৯৮ সালে। এখানে পড়ন্ত বিকালে মাজার এলাকা, বাদাম তলা কিংবা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চোখে পড়ে বন্ধুত্বের আড্ডায়। অবশ্য সকালটা শুরু হয় সবুজ ছাউনির ক্যান্টিনে বা নানির টং দোকানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে এক কাপ চা পানের মধ্য দিয়ে। কোনো দিন সকালে ক্লাস শুরু হয়ে গেলে বন্ধুর কল পেয়ে ঘুম ভাঙে কারও। আবার টানা ক্লাস শেষে অবচেতন মনে হেঁটে চলা শিক্ষার্থীদের হঠাৎই মন কেড়ে নেয় মিডিয়া চত্বরের আড্ডা থেকে ভেসে আসা গিটারের টুংটাং সুর আর নন প্রফেশনাল কণ্ঠের পরিচিত বাংলা গানগুলো। এমন অনুভূতিগুলো হরহামেশাই ঘটত ক্যাম্পাস চলাকালীন।

বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবই কল্পনাতীত। গত মার্চ মাসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, বন্ধুত্বের আড্ডা বন্ধ হয়ে গেছে। এমন সুমধুর মুহূর্তের আড্ডা না হলেও অনলাইনে ভিডিও কল বা গ্রুপ কলে আড্ডা জমিয়ে তুলছেন কয়েকজন।

এদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আয়শা আফরিন চৈতী। তিনি বলেন, আমার এটি শেষ বর্ষ ছিল। ক্যাম্পাসে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইচ্ছে ছিল। তা আর হলো না এ করোনায়। বাদাম তলার আড্ডা ভীষণ মনে পড়ে। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে রোজ বসতাম। প্রচুর ছবি তুলতাম। ক্যাম্পাস বন্ধে জীবন স্বাদহীন হয়ে গেছে। থেমে গেছে প্রাণের স্পন্দন।

চৈত বলেন, আড্ডা এখনও হয় তবে অনলাইনে। সেই মিলেমিশে, হাসি কান্নায় একাকার হয়ে যাওয়াটা কেবল হয়ে উঠে না। এখন মাঠে বসে হাসতে হাসতে বন্ধুর গায়ের উপর ঢলে পড়া কেবল স্মৃতি। ছবি এখনও তুলি। কিন্তু ক্যাম্পাসের হৈ হুল্লোড়ে ছবি তোলা আর বাসায় ছবি তোলার মাঝে অনেক ভিন্নতা আছে। বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো খুব মনে পড়ে। সিনিয়রদের ভালোবাসা, শাসন বড্ড মনে পড়ে যায়। আবার কবে মুখরিত করতে পারবো আমাদের চিরচেনা ক্যাম্পাসকে, সেই আশায় দিন গুনছি।

এ বিদ্যাপীঠে নানারকমের শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে একদল গানপ্রিয়। দুপুর কিংবা সন্ধ্যায় কাঁধে কালো গিটারের ব্যাগ নিয়ে দেখা যায় তাদের। ক্যাম্পাস মুখরিত থাকত এই কন্ঠ শ্রমিকদের গানে। এমনই শিক্ষার্থী আবু মুহাম্মদ রুইয়াম। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস একজন শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ অনুভূতির জায়গা। আমার কাছেও তাই। ক্লাস শেষে যখন বাদাম তলায় সবাই একসাথে দূঃখবিলাস গাইতাম, নিমিষেই যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। দুপুর বেলার গানের সেই আড্ডায় সকাল থেকে পুষে রাখা ক্ষুধার কথা যেন ভুলে যেতাম আমরা। সুরে সুরে ভরে যেত ক্যাম্পাস। মনে হতো ক্যাম্পাসের প্রতিটি ইট আমাদের সাথে গাইছে। তিনি আরও বলেন, সংগীত আমার কাছে ভালোবাসার নাম। এখনও গান গাওয়া হয়, আনমনে গিটার বাজানো হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে বসে সেই আড্ডা আর হয় না।

ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল হাতের নাগালে পেলেই মাঠের দিকে। কখনো ক্লাসের ফাঁকে, কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে খেলছে। এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম নয়। গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা, হোক শীত তাদের খেলতে দেখা যাবে। খেলা যাদের জীবন। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলের খেলোয়াড় তারেক হাসান এ পথের পথিক। ৪র্থ সেমিস্টারে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, সবার সাথে এক সাথে অনুশীলন করা, খেলার পর চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া, এক সাথে খেলতে যাওয়া এই সময়গুলো ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট দেয়। ক্যাম্পাসে খেলার স্মৃতিগুলো কখনও ভুলা যাবে না। আশায় আছি কবে ক্যাম্পাস খুলবে! তারেক হাসান বলেন, এখন কাশিমপুর কারাগারে আছি মনে হচ্ছে। প্রতিটি দিন খুব খারাপ কাটছে। কবে যে ছাড়া পাব! সেই আশায় দিন গুনছি। খেলা ও আড্ডায় হারিয়ে যেতে চাই আবারও। লেখক : শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ধুলোপড়া,স্মৃতি,গণ বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close