আল-আমিন মিয়া, গণমাধ্যমকর্মী

  ২৪ জুলাই, ২০২০

করোনাকালীন সাংবাদিকতায় তিক্ত অভিজ্ঞতা

মাস-পাঁচেক আগের কথা। যখন টিভি ও খবরের কাগজে লিড নিউজ হিসেবে প্রকাশ করা হচ্ছিল চীনের উহান শহর থেকে করোনা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। অদৃশ্য এই ভাইরাস মোকাবিলায় একদমই অপ্রস্তুত গোটা বিশ্ব। তবু হয়তো বিশ্বের উন্নতশীল দেশগুলো এই ভাইরাস মোকাবিলায় আগাম কিছু প্রস্তুতি নিয়েছে। সে তুলনায় আমাদের বাংলাদেশ একদমই অপ্রস্তুত ছিল বলে বলা যায়। তবু যখন আমাদের দেশে এই করোনা হানা দেয়, তখন থেকেই সরকারের নির্দেশে এই ভাইরাস মোকাবিলায় ডাক্তার-নার্স, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের বীর সেনারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে একযুগে কাজ করা শুরু করে এই ভাইরাস মোকাবিলায়। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীও। তাছাড়া সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন মানুষ এই মহামারি করোনা মোকাবিলায় জনকল্যাণমূলক নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে। যা এক কথায় প্রসংশনীয়।

আমি মনে করি, একজন সংবাদকর্মীর নৈতিক দায়িত্বই হচ্ছে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের ক্রান্তিলগ্ন এ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরা। ঠিক সেই নৈতিকতা থেকে আমিও একজন সংবাদকর্মী হিসেবে প্রথম থেকেই সরেজমিনে থেকে চেষ্টা করেছি এসব পদক্ষেপ তুলে ধরার জন্য। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কারণ, সরকারের নির্দেশনাগুলো তো বাস্তবায়নে সরেজমিনে কাজ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাই, জনসাধারণ নির্ভরযোগ্য ও আশার আলো খুঁজার চেষ্টা করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছেই। এছাড়া বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমের অনিয়ম সম্পর্কে খোঁঁজ রাখা ও জনসাধারণ সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে কি-না খবর রাখাসহ বিভিন্ন স্তরে খোঁজ রাখতে হয় একজন সংবাদকর্মীকে।

সংবাদকর্মীর এ পেশায় পদার্পণ ২০১০ সাল থেকে। জন্মের পর থেকে এমন মহামারি রোগ আর দেখিনি। যে কারণে, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিবার ও নিজের জীবন হারানোর ভয়ও কম ছিল না। তবু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীর পদক্ষেপ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে হয়েছে সরেজমিনে। আবার এই মহামারিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গুজবও কম ছিল না। যেকারণে গুজবে পড়ে অনেক দ্রব্যমূলের দামও দ্বিগুণ হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় গুজব এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের ভূমিকাও ছিল সব থেকে বেশি। তাই মহামারির এ সময়ে সব থেকে বেশি ব্যস্ত ছিলেন সংবাদকর্মীরা। তাছাড়া ঢাকা শহরে সাংবাদিকতার তুলনায় মফস্বলে সাংবাদিকতা একদম ভিন্ন। এখানে একে-অপরের পরিচিত। এক কথায় মফস্বলে সাংবাদিকতা করা খুবই কঠিন ব্যাপার।

মফস্বলে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্রাইম নিউজ করতে গেলে তো হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি হজম করতে হয় সবার আগে। বর্তমানে করোনা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে নতুন রূপে আরও তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। যেমন, আলাল-দুলাল একে-অপরকে দোষারোপ করার মতো। আলাল বলছে, দুলালের জনসেবামূলক সবগুলো কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা একটু বেশিই লেখালেখি করি, দুলালও ঠিক তা-ই বলছে আলালকে নিয়েই লেখি। আর এতে করে অনেক ব্যক্তির রোষানলে পড়া ও বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখেও পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেমন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের সব সংবাদ তো আমরা প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ, বিভিন্ন দল-সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ের পদক্ষেপগুলোর সম্পর্কে যেগুলো জানতে পেরেছি, তা হয়তো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। আর যেগুলোর পদক্ষেপ সম্পর্কে অজানা ছিল তা কি প্রকাশ করা সম্ভব!

আর যদি স্থানীয়ভাবে একই রাজনৈতিক দলের একাধিক গ্রুপিং থাকে, তো কোনো কথাই নেই। খুব সহজেই একজন সাংবাদিককে একটি পক্ষের সাংবাদিক বানিয়ে চালিয়ে দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই। যা প্রতিনিয়ত একটি শ্রেণি দ্বারা মফস্বল সাংবাদিকতায় অব্যাহত রয়েছে।

লেখক : প্রতিনিধি, পলাশ (নরসিংদী)

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তিক্ত অভিজ্ঞতা,করোনা,সাংবাদিকতা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close