আল-আমিন মিয়া

  ২০ জুলাই, ২০২০

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ-সাগর অতল।’ তেমনি ক্ষুদ্র থেকেই বৃহত্তের সৃষ্টি। জগতের সকল বিশাল ও মহৎ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ক্ষুদ্রের অবদান, ক্ষুদ্রকে তুচ্ছ বা অবহেলা করা ঠিক নয়। ছোট থেকেই যেকোনো কিছু এক সময় বড় রূপ ধারণ করে। পৃথিবীর কোনো বস্তুকে ক্ষুদ্র বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। কারণ বহু ক্ষুদ্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় বৃহৎ। ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আমাদের চারপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে মফস্বলের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও অতুলনীয় ভূমিকা রাখে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে। শুধু তাই নয়, এসব ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে হাজার হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাই, অতি দ্রুত এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

বর্তমানে করোনার হানায় সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৫শতাধিক পরিবার ও তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় এক হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শুধু তাই নয়, এসব ক্ষুদ্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে এই শিল্পের সাথে জড়িত অধিকাংশ মালিকরাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দিশেহারা। তাছাড়া অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার গড়পাড়া গ্রাম ও উপজেলার ডাঙ্গার ইউনিয়নের কেন্দুয়াব, তালতলা, জয়নগর, হাসানাটাসহ কয়েক গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, করোনা সংকটে এসব শিল্পের সাথে জড়িত অধিকাংশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোই বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে এসব শিল্পের সাথে জড়িতরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শুধু তাই নয়, করোনা সংকটে বন্ধ হয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল ও ঘর ভাড়া নিয়েও বিপাকে রয়েছেন তারা। এ নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় পৃথক দুটি শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন দুটিতে কুটির শিল্পের সাথে জড়িত জাহিদ হাসান প্রতিদিনের সংবাদকে জানিয়েছিলেন, কর্মজীবনে পদার্পণ করার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায় ধরা খেয়ে সংসার জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার ভিতরে পড়ে যাই। তবু মনের সাহস-শক্তি ও নিজের কর্ম দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে প্রায় ৪ বছর আগে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে দুটি এমব্রয়ডারি মেশিন কিনে বিভিন্ন ওড়না, শাড়ি ও থ্রি পিস তৈরি করার কাজ শুরু করেন। এরপর কর্মজীবনে অনেকটা সফলতার হাতছানিও দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে দেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। যেকারণে এখানে কর্মরত অনেক শ্রমিক-কর্মচারীরাও বেকার হয়ে পড়ে। আবার মেশিন গুলোকে সচল রাখার জন্য লস দিয়ে অনেক শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। একইভাবে এই শিল্পের সাথে জড়িত মানজুরুল হক আফসার জানিয়েছিলেন, এ শিল্পের সাথে জড়িত অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের এক রমজান ঈদ থেকে আরেক রমজান ঈদ পর্যন্ত মার্কেটে বাকি পড়ে থাকে। আর এবারের রমজান ঈদে করোনা সংকটের কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই তাদের বাকির টাকা তুলতে পারেননি। আবার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে। যেকারণে কর্মহীন হয়ে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়াও এই শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার দাবি জানান তারা।

অপরদিকে-পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ধ্বংসের দাঁড়-প্রান্তে হাজারও তাঁতশিল্প । অর্থনৈতিক সংকট, কাঁচামালের অভাব ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে চলে এসেছে এ অঞ্চলের তাঁত শিল্প। এছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধি ও কারিগরের অভাবে তাঁত শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এখানকার তাঁতিদের মাঝে। একদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজার মূল্য কম হওয়ায় কাপড় তৈরি করে পোষাতে পারছেন না অধিকাংশ তাঁতিরা। অন্যদিকে মহাজনদের চরা সুদে টাকা পরিশোধের তাগাদা ও করোনার হানায় মরার ওপর পুড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার তাঁতিদের মাঝে। আমির হোসেন তাঁত শিল্পী জানিয়েছিলেন, সুতার দাম বৃদ্ধি, সব সময় চাদরের চাহিদা না থাকা ও অর্থাভাবে এ পেশা থেকে অনেকেই ছিটকে পড়েছেন। যে কয়জন এ পেশায় রয়েছেন তা রেওয়াজ পড়ে কষ্টের মাঝে বাপ-দাদার পোশাকে আঁকড়ে বেঁচে আছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশে করোনা সংকটের কারণে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এ পেশার সাথে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। তাই, অতি দ্রুত এসব ক্ষুদ্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার দাবি করলেও এখনো পর্যন্ত এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তাই, তাদের সেই দাবির সাথে একমত পোষণ করে আমাদেরও দাবি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে অতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ক্ষদ্র ব্যবসায়ী,কার্যকর পদক্ষেপ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close