শ্যামলী তানজিন অনু, শিক্ষার্থী

  ০৪ জুলাই, ২০২০

করোনায় বেকারত্বের গতি

কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। অনেকেই লকডাউন শিথিল করছে কিন্তু পূর্ণমাত্রায় কেউ কাজ শুরু করতে পারেনি। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে মানুষকে ঘরে থাকতে বলায় থমকে গেছে যানবাহন ও কলকারখানার চাকা। সেই সাথে থেমে গেছে অর্থনীতিও। এ অবস্থায় দেশে দেশে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় শক্তি হলো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, যার দশা এখন ঠেলাগাড়ির ন্যায়। কর্মসংস্থানের একটি বিশাল অংশ হলো পোষাক শিল্প। বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যের বেশিরভাগই পোশাক। ইউরোপ ও আমেরিকার করোনার প্রভাবের কারনে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। লক্ষ রাখতে হবে এ সময়ে যেনো চাকরি না যায়। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে কর্মী ছাঁটাই স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় বাধা।

যেখানে ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশে বেকারত্বের ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে সেখানে এশিয়ো দেশগুলো বাদ যাবে কিভাবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। মালদ্বীপেও একই সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৈশিক মহামারী করোনায় ক্রমবর্ধমান হারে মানুষ-ই কেবল মরছে এমনটা না। সেই সাথে বিশ্ব অর্থনীতিকে দমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতি যে মন্দার সম্মুখীন তা অতীতে যে কোনো মহামন্দাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর তাই অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সেটা এখন ভাববার বিষয়। তার সাথে ভাবতে হবে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন নিয়েও।

ভয়াবহ এই করোনার কারনে দেশ তথা সারা বিশ্বে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে। ইতোমধ্যে কর্মী ছাটাই শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা আইএলও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই ভাইরাসের কারনে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিরুপ প্রভাব পড়ছে তাতে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের আংশিক বা পুরোপুরি বেকার হয়ে যেতে পারে। আইএলও আরও বলেছে, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন সংকট আর আসেনি। এছাড়া গতবছর ডিসেম্বরে আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে বেকার হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। ক্রমেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দীর্ঘ হচ্ছে। তাছাড়া ২০২০ সালে ২য় প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপি প্রতিষ্ঠানগুলো ৬.৭ শতাংশ কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেছে উপরোক্ত সংস্থাটি।এটি প্রায় ২০ কোটি পূর্ণকালীন কর্মজীবী মানুষের চাকরী হারানোর বাস্তবতা সৃষ্টি করবে।

উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত উভয় দেশগুলোর জন্য বেকারত্ব প্রধান সমস্যা। যে-কোনো দেশে উন্নয়নের পথে বড় বাধা হলো বেকারত্ব। করোনার প্রভাবে বিশ্বের ছোট বড় মাঝারি সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই ক্ষত সারাতে কর্মী ছাটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। যার ফলে বিশ্ব বেকারত্বের মতো বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। যেই সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। কারন বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া যা বছরের পর বছরের ফল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ নাগরিক বেকার ভাতা দাবি করেছে। বেকার সমস্যা কতোটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।

আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে এই ভাইরাসের কারনে। এই মুহূর্তে উদিয়মান দেশগুলোর প্রয়োজন আড়াই লাখ ট্রিলিয়ন ডলার। এই মন্দা ২১ সালে সামলে ওঠা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতির মুল ধাক্কাটা খাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের মধ্য দিয়ে। গত মার্চে স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা এ যাবতকালের সর্বাধিক। দেশটির সরকারি হিসাব বর্তমানে বেকারত্বের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। তারমানে এক মাসে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এক পরিসংখ্যানের হিসাব মতে লকডাউনের শুরু থেকে স্পেনে চাকরি হারিয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮২২ জন।যার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার অস্থায়ী কর্মী।

বিশ্বের কয়েক দেশ বাদ দিলে সব দেশেই প্রায় করোনায় প্রাণহানির সাথে বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতির একটি দিক চাকরির বাজার যা অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করতে পারে। তবে করোনার কারনে এই দিকের টালমাটাল অবস্থা। বিশ্বে দৈনিক করোনার ছোবলে প্রান হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।চীনে অবস্থা সব থেকে বেশি ভয়াবহ ছিলো। তবে সেই ঝুঁকি চীন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাতিব্যস্ত সারাবিশ্ব। এই পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে তবে অর্থনীতি আরও বড় বিপদের সম্মুখীন হবে। মুলকথা করোনায় যে হারে বেকারত্ব বাড়ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশ তথা বিশ্ব অর্থনীতির সিংহভাগ অচল হয়ে পড়বে।

ঘরে ঘরে খেয়াল করলে এখন বেকার যুবক-যুবতী চোখে পড়ে। যার দরুন পরিবারে অশান্তি ঝামেলার সৃষ্টি হছে। পরিস্থিতি কবে স্বভাবিক হবে, কবে আবার মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত যুবক-যুবতী ছুটবে কাজের খোঁজে। কেউ ফিরবে পূর্ব কর্মস্থলে।

আর তাই... বেকারের কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যাগে কিছু কাজ করা, সেটা হতে পারে অনলাইন বিজনেস, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। কর্মী ছাটাই এর মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়া। তা না হলে অর্থনীতির বারোটা বাজতে দেরি নেই। ঘুচে যাক বেকার পদবী। সুস্থ হোক পৃথিবী,ফিরে যাক যে যার গন্তব্যে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,বেকারত্ব
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close