ওয়াশিংটনে রাবি এলামনাই-এর বনভোজন ও কমিটি গঠন
মতিহারের সবুজ চত্বরে ফেলা আসা স্মৃতি রোমান্থন করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন বনভোজনে। প্রবাসে ব্যস্ত জীবনের পিছুটান ঠেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, ওয়াশিংটন ডিসি'র অনুষ্ঠান, তাইতো এমন প্রাণের উচ্ছাস।
টগবগে যৌবনে পেরিয়ে অনেকেই এখন প্রৌঢ় বয়সে পড়েছেন। কিন্তু রাবির প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসা যেন এতটুকু ম্লান হয়নি তাদের। অনুষ্ঠানে এসে কেউ খুঁজে পায় তাদের শিক্ষক, বন্ধু, বড় ভাই-বোনকে। প্রবাসে যেখানে বাংলাদেশি মানুষ পেলে উচ্ছাসের ঘাটতি থাকে না, সেখানে ক্যাম্পাসের পরিচিত জনকে পেয়ে যেন আনন্দ- উল্লাসের কমতি ছিল না।
'এসো মিলি শেকড়ের টানে, রাবিয়ানরা একসাথে' এই স্লোগানে গেল ২৯ শে জুলাই (শনিবার) বনভোজন ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, ওয়াশিংটন ডিসি। একইসাথে সংগঠনের কাজ বড় পরিসরে করতে গঠন করা হয় নতুন কমিটি।
অনুষ্ঠান কোরআন তোলওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এস এম জাহিদুর রহমান ও ড. ইয়াসমিন এর কন্যা জাফরা রহমান।
এরপর শুরু হয় পরিচিতি ও বক্তব্যের পালা। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ব্যক্তব্যের সময় অনেকে আনমনা হয়ে ক্ষণিকের জন্য ফিরে যায় রাবি ক্যাম্পাসে।
জোহরের নামজের বিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্বের আলাপচারিতা।
নামাজের বিরতির পরে শুরু হয় দুপুরের খাবার। ক্যাম্পসের প্রিয় মানুষদের সাথে মিলতে নিজ গৃহে তৈরি করা নানা পদের, নানা স্বাদের খাবার নিয়ে হাজির হয় অনেকে। সুস্বাদু এসব খাবার বেশ আনন্দের সাথেই গ্রহণ করে আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে গানে গানে চলতে থাকে আলাপচারিতা এবং পারস্পারিক পরিচিতি। গান পরিবেশন করেন ওয়াশিংটন ডিসির জনপ্রিয় শিল্পী অসিম রানা, ড.সীমা খান, বুলবুলি ইসলাম, মাসুদ রহমান প্রমুখ।
পড়ন্ত বেলায় সুরের মূর্ছনায় হঠাৎ বৃষ্টির আগমন সবাইকে উদ্বেলিত করে। বৃষ্টি বিলাসে ফিরে যায় মতিহারের সবুজ আঙ্গিনায়।
বনভোজনে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতারও পূর্বের পরিসংখ্যানের ছাত্র ড. কাশেম। তিনি ওয়াশিংটন ডিসির হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন দশক ধরে অধ্যাপনা করেন; এখন তিনি প্রফেসর ইমিরেটস। স্মরণ করেন ফেলে আসা দিনগুলি, সহপাঠী, সহকর্মীদের কথা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্টার অধ্যাপক এন্তাজুল ইসলাম জানান, ছাত্র জীবন, শিক্ষকতা ও প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে তর অভিজ্ঞতা। তিনিই ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম সেক্রেটারি।
প্রফেসর ড.আতিয়ার রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের সুন্দর সময় বলে অবহিত করেন।
অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের জন্য ছিল 'যেমন খুশি তেমন সাজো'। পুরুষরা সুই সুতান মালা গেঁথে ভালোবাসার বন্ধনে স্ত্রীদের গলায় মালা পরিয়ে দেয়। আর ঈদের আমেজকে জাগিয়ে তুলতে মেয়েরা হাতে দেয় মেহেদী। পরে বাচ্চাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাবেক রেজিস্টার ড. এন্তাজুল ইসলাম।
আর র্যাফেল ড্রতে ৫০ ইঞ্চি টেলিভিশন জিতে নেন শিল্পী ড. সীমা খান। উল্লেখ্য র্যাফেল ড্র স্পনসর করেন রিয়েলেটর মো.মজিবুল হক।
পিকনিকের আমেজের মধ্যেই এলামনাই-এর সকলের উপস্থিতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, ওয়াশিংটন ডিসি-এর কমিটি গঠন করা হয়। অ্যালামনাই ও উপস্থিত সকলের সম্মুখে ভোটের মাধ্যমে —প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জোহুরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি হন আজিমা আজমল (রক্সি)। নির্বাচন পরিচালনা করেন ড.মোহাম্মদ কাসেম, ড.এন্তাজুল ইসলাম। প্রকাশ্যে কেউ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী না থাকায় ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে রাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের আবেগের সংগঠন এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাসেম, প্রফেসর ড. এন্তাজুল ইসলাম ও প্রফেসর ড. আতিয়ার রহমান। আর সাবেক রাবিয়ানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মোহাম্মদ আলি সিদ্দিক,জোহুরুল ইসলাম,মো. জাহিদুর রহমান, মো. আবু জাফর, মো. হেলাল, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মঞ্জুরুল আলম, ড.সাদ আহমেদ, ড. ফিরোজ কবির, ড.রিপন, মোহা. মরসেদ, এস এম জাহিদুর রহামান, হালিমা কাসেম, খানম তুহফা হক, জেসমিন কবির, হেলেনা পারভীন, আজিমা আজমাল, আরিজা মাহিদ (টিবা), জান্নাতুল ফেরদৌস জনি, নিতু রহমান, বিউটি করিম, ড. ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন- আবু জাফর ও সাংবাদিক জাহিদ রহমান। আর গরম আবহাওয়ার মধ্যে উপস্থিত থাকায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এলামনাই এর প্রতিষ্ঠাতা এস এম জাহিদুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ২৩ শে অক্টোবর পিকনিক এবং আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে পথ চলা শুরু হয় সংগঠনটির। গেল বছর ১০ই ডিসেম্বর পিঠা উৎসবও করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন ওয়াশিংটন ডিসি।