যেদিন থেকে আবার বৃষ্টি হবে
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি লঘুচাপের প্রভাবে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। দেশজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। তবে গতকাল শুক্রবার সকালে মেঘ কেটে ঢাকার আকাশে উঁকি দেয় সূর্য। রোদে বাড়তে থাকে তাপমাত্রাও। দুপুরের আগে আগেই মেঘ কালো করে আবারও নামে বৃষ্টি। প্রায় ঘণ্টাখানেক মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে। আজ শনিবার থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমে তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং আগামী মঙ্গলবার থেকে আবার বৃষ্টি হবে।
এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নদীর পানি বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দেশের সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে কয়েক দিন ধরে সারাদেশে বৃষ্টি হয়। এটি বুধবারই দুর্বল হয়। লঘুচাপটি দুর্বল হওয়ার ফলে বৃহস্পতিবার সারাদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বৃষ্টি কমে তাপমাত্রা একটু বেড়ে যায়।
মো. ওমর ফারুক আরও বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সারা দেশেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ১ অক্টোবর, অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। এরপর তিন থেকে চারদিন সেই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজ শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আজ দেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হবে। গতিবেগ থাকবে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা রয়েছে ৯৮ শতাংশ। আজ ঢাকায় সূর্যোদয় হয় ৫টা ৫০ মিনিটে, সূর্যাস্ত ৫টা ৪৯ মিনিটে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল শ্রীমঙ্গলে।
সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বাড়ছে। তবে আগামীকাল রোববার থেকেই তা কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা তথ্যকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, রংপুর ও সিলেটে নদীর পানি বাড়ছে; পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়বে। এর পর ২৪ ঘণ্টা পানি স্থিতিশীল থাকবে, তারপর থেকে কমতে থাকবে। বন্যা তথ্যকেন্দ্র নিয়মিত বুলেটিনে বলেছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বাড়ছে, অন্যদিকে দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পরের দুই দিন এই প্রবণতা কমে আসতে পারে। ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দ্রুত বাড়তে পারে। পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল এবং এর পরের এক দিনে কমতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হয়ে সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল এবং কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী তিন দিন ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর অফিস জানায়, দু’দিন ধরে টানা বর্ষণসহ উজান থেকে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের নদনদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার। সকাল ৬টায় ছিল ৫১ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। সেখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।