নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ নভেম্বর, ২০২২

কপ-২৭ সম্মেলন : জলবায়ু তহবিলে ৩০ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ 

ফাইল ছবি

২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় অভিযোজন তহবিলে অর্থায়নে উন্নত দেশগুলো থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অভিযোজনের লক্ষ্যমাত্রা এখনো ঠিক হয়নি, এটি নিয়ে দর কষাকষি চলছে। প্রথম ৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পেরেছে। একটি বৈশ্বিক অভিযোজন পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ লবিং করেছে। সেটিও গৃহীত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৭) বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ এ তথ্য জানান। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জনের বিষয়ে ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘একটি জাতি হিসেবে আমরা যে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও অত্যন্ত সংগঠিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করছি সে জায়গাটি তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধভাবে গুণগত মানসম্পন্ন বক্তব্য যাতে সম্মেলনে যায় সে জায়গাটা বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে।’

সচিব বলেন, ‘আগামী দু-বছর কারিগরি পর্যায়ের চারটি সংলাপ হবে। মিনিস্ট্রিয়াল পর্যায়ে একটি সংলাপ হবে, এর মাধ্যমেই এটি চূড়ান্ত রূপ নেবে। এই যে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হবে সেখানেও বাংলাদেশ অবদান রাখবে। আমরা সেখানে আমাদের দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি।’

‘সুনির্দিষ্টভাবে বললে অভিযোজন তহবিলে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অঙ্গীকার এসেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে ৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার পাবে। পাশাপাশি এই সম্মেলনে আমরা অত্যন্ত সফলভাবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক মিটিং করতে সক্ষম হয়েছি। নেগোসিয়েশন মিটিং করেছি। সেটা আমাদের অভিযোজন তহবিলে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিক পটভূমি তৈরি করেছে বলে আমরা মনে করছি।’

ফারহিনা আহমেদ আরো বলেন, ‘এছাড়া আমরা ২০ মিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। যাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে, আশা করি আমরা এখানে আরো অনেক অর্জন করতে পারব।’

সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কাঠামো ইউএনএফসিসিসির আওতায় গত ৬ থেকে ২০ নভেম্বর মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৭ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি ছোট কিন্তু দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।’

তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে ৭ থেকে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হাই লেভেল সেগমেন্টে ১১০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রেজিউমড হাই লেভেল সেগমেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেই।’ স্টেটমেন্টে চারটি দাবি তুলে ধরা হয় জানিয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ এড়ানো, কমানো এবং মোকাবিলার জন্য একটি অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছি আমরা।’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কপ-২৭ এ গৃহীত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘অধিক বিপদাপন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোয় লস অ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবিলায় নতুন একটি তহবিল গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কপ-২৮ এ ওই তহবিল বাস্তবায়নের জন্য এবং এর বিস্তারিত বিষয় ঠিক করার জন্য একটি ট্রানজিশনাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

অতীতের লস অ্যান্ড ড্যামেজের মতো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এবার লস অ্যান্ড ড্যামেজের ওপর আমরা যেটা পেয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটা শুভ লক্ষণ। আমরাসহ আমাদের পাশাপাশি যেসব ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আছে তাদের লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য বিশ্বব্যাপী একটা সাহায্য তারা করবে।’

শাহাব উদ্দিন আরো বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবিলায় নতুন একটি তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্তসহ শার্ম আল-শেখ ইমপ্লিমেন্টশন প্ল্যান পৃথিবীর সব দেশ অভিনন্দনের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। তবে এর সফল কার্যকারিতা নির্ভর করবে যথার্থ বাস্তবায়নের ওপর। আমরা আশা করি, বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় আরো তৎপর হবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জলবায়ু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close