নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিবেশ সুরক্ষায় আইন আছে, প্রয়োগ নেই
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আল-আমিনের দিন শুরু হয় বড়বাজার এলাকায় তুরাগ পাড়ে পড়ে থাকা ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধে। এ রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন নাকে রুমাল চেপে তাকে যেতে হয় অফিসের দিকে। শুধু এ এলাকাই নয়, দেশের অনেক জায়গাতেই রয়েছে এমন দুরবস্থা। যদিও পরিবেশ সুরক্ষায় আইন থাকার পরও নেই প্রয়োগ।
তবে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলছেন, পরিবেশের মানোন্নয়নের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পরিবেশ আইন ১৯৯৫, ২০১০ (সংশোধিত); এ আইন অনুসারে আমরা পরিবেশের ক্ষতিকারক শিল্প কলকারখানার ব্যাপারে কঠোর আইন প্রয়োগ করেছি। যারা ইটিপি, এসটিপি (অস্থায়ী ডাস্টবিন) স্থাপন করেছে, মন্ত্রণালয় থেকে তাদের উৎসাহ দিতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ নেবে, তাদের অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। যারা পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম হাতে নেবেন সরকার তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত।
কয়েক দশকে জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, বনজসম্পদ আহরণসহ নানা কারণে দেশে বনভূমির পরিমাণ কমে আসছে।
বন অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশের ভূমির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত থাকলেও প্রকৃত বন আচ্ছাদিত বনভূমির পরিমাণ আট ভাগের বেশি নয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখল হয়েছে। ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯ প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০ প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে, যা বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য অশনিসংকেত।
ইন্টার গভর্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফরম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেসের (আইপিবিইএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক দশক ধরে প্রায় এক মিলিয়ন প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখোমুখি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করায় বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণে পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন।
এ বিষয়ে বনমন্ত্রী বলেন, বনায়নের ব্যাপারে সরকারি গাছ ও বনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো অবস্থায় তা বিক্রি করা যাবে না। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আইন করে আমরা এটা বন্ধ রেখেছি। এ পর্যন্ত আমরা ১৪ শতাংশ বন সংরক্ষণ করতে পেরেছি। ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমরা তা ১৬ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। সে অনুযায়ী, আমরা আমাদের রিজার্ভ ফরেস্ট সংরক্ষণ, যেসব জায়গা থেকে গাছ উজাড় হয়েছে, সেসব জায়গায় নতুন করে গাছ লাগানোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। সামাজিক বনায়ন ও রিজার্ভ বন মিলে বনভূমির পরিমাণ ২২ শতাংশ। এটাকে ২০৩০ সালে আমরা ২৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি দেশের পরিবেশ আইন, ১৯৯৫ লঙ্ঘন করে নির্বিচারে শিল্পায়ন ও বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ডায়িং কারখানা ও ট্যানারিগুলোর শিল্পবর্জ্য নদ-নদী, খাল-বিলসহ প্রাকৃতিক উন্মুক্ত জলাধারগুলোয় নিক্ষেপের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক জলাধার বা জলজ জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে বিনষ্ট করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যাপারে আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশেষ করে পলিথিন যখন শপিং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এটি আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বাজার থেকে তা পুরোপুরি উঠিয়ে নেওয়া যায়নি। আমরা এর বিকল্প ব্যাগ তৈরির ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সেটাও এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা অনেক বেশি প্রয়োজন।