লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ‘মিরিঞ্জা ভ্যালী’
ভ্রমণ পিপাসুরা খুঁজে ফেরেন নতুন নতুন দর্শনীয় স্থান। চোখ জুড়ানো এমন ভিউ দেখার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি এখন মিরিঞ্জা ভ্যালী।
এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া থেকে কিমি দূরে বান্দরবানের লামা উপজেলায় সমতল থেকে ১৫০০ ফুট উপরে পাহাড় চুঁড়ায় অবস্থিত। মিরিঞ্জা ভ্যালিতে আকাশ-মেঘ ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালি। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের খেলা উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। এখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব।
প্রকৃতি এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরও বৈচিত্র্যময়। শীতের এ মৌসুমেও এখানে গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব, প্রকৃতি নতুন উদ্যমে সেজেছে। বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর ঘুরেফিরে। পর্যটনকেন্দ্রটির কাছেই উপজেলা সদরে আরও থাকছে, মুরং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার সম্প্রদায় উপজাতির সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। থাকছে সুখী ও দুঃখী নামের দুটি ১ হাজার ফুট উঁচু ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী।
নীল আকাশের নিচে সবুজ পাহাড়, শুভ্র মেঘ আর হিমেল হাওয়ার দেশ সবুজ স্নিগ্ধ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভুমি চোখ জোড়ানো সেই মিরিঞ্জা ভ্যালী ভ্রমণপিপাসুদের দিচ্ছে হাতছানি। এখানে রয়েছে সর্পিল ঢেউ খেলানো ছোট-বড় পাহাড় ও পাহাড়ের বুক চিরে অসংখ্য ঝিরি ঝর্ণা। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় ও মনোরম দৃশ্যের সমাহারে ‘মিরিঞ্জা ভ্যালি’ ঠিক যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। দুই বছর আগে মিরিঞ্জা ভ্যালীতে একটি জুমঘর দিয়ে শুরু হয়েছিল মিরিঞ্জা ভ্যালী রিসোর্ট। এর পরপরই গড়ে উঠেছে মারাইংছা হীল, মেঘনীল, ডানিয়াল মুরুং, সানসেট, মেঘবেলা, ডেঞ্জার হীল, টপ পয়েন্ট ভিউ, চোন্দার বক্স, ন্যাচারাল ভিউ পয়েন্ট, মারাইংচা ওয়াইল্ড ও মিরিঞ্জা ইকো নামে আলাদা আলাদা রিসোর্ট। আরো পাঁচ-ছয়টা রিসোর্টের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি রিসোর্টে থাকার জন্য আছে জুমঘর, তাবু ও কটেজ।
একারণে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান এখন মিরিঞ্জা ভ্যালী। প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার পর্যটক। চট্টগ্রাম থেকে আসা নোমান, আরাফাত, কাউছার ও ভৈরব থেকে আসা পর্যটক মাহফুজুর রহমান হিমেল গতকাল সোমবার জানান, এখানকার ভিউ একথায় অসাধারণ। বলে বুঝাতে পারব না। হিমেল আরও বলেন, আমার সঙ্গে আরও ৮ -১০ জন এসেছে। তাবু ভাড়া করে আছি ২ দিন।
তবে এখানে পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তার সমস্যা রয়েছে। ১-২ কিমি কাঁচা রাস্তা। রাস্তাটি পাকা কিংবা এইচবিবিকরণ হলে বিদ্যুৎ ও পানির সমাধানও হয়ে যাবে।
মিরিঞ্জা ভ্যালী যেতে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে ৭০, শর্টবডি ৮০, অটোরিকশায় ১০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া পড়বে। রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ ৩ থেকে ৪ হাজার, জুমঘর ২ হাজার, তাবুতে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে।
আপনি চাইলে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন লামা শহরসহ তংথমাং রিসোর্ট, অনন্য রিসোর্ট, সুখিয়া ভ্যালী,ি রভার হিল, রিভার ভিউ ও মিরিঞ্জা প্যারাডাইজ টুরিজম।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটন শিল্পে সম্ভবনাময় অরণ্য রাণী লামাকে পর্যটনে রুপ দিতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। এখন মিরিঞ্জা ভ্যালীর মাধ্যমে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এখানকার সমস্যা সমাধানে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।প্রথম উদ্যোক্তা মিরিঞ্জা ভ্যালী রিসোর্টের মালিক জিয়াউর রহমান বলেন, দু’বছর আগে সখের বসে আমি একটি জুমঘর তৈরি করি। বন্ধু-বান্ধব যাওয়া আসা করতে করতে এখানকার অসাধারণ ভিউ’র কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখন ১২টি রিসোর্ট হয়েছে এখানে। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসছে। তবে রাস্তার কারণে আমরা আধুনিক মানের সেবা দিতে পারছি না।
লামা আবাসিক প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ সিদ্দিক (আর ই) বলেন, মিরিঞ্জা ভ্যালী আমাদের প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ আমরা এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। শুধু রস্তার কারণে আমাদের কাজ থমকে আছে।
লামা উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান চৌং বলেন, মিরিঞ্জা ভ্যালী একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ও এই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তার ব্যবস্থা করা অত্যান্ত জরুরি। বিষয়টা আমরা পরিষদে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ে সমাধানের চেষ্টা করব।