বিনোদন প্রতিবেদক
সাফল্যের মন্ত্র আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া : ববিতা
শুধু বাবা দিবস এলেই যে আব্বাকে মনে পড়ে, বিষয়টি এমন নয়। আমার জীবনজুড়ে জড়িয়ে আছেন আব্বা। সবাই বলেন, আমি না কী আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু আদৌ কী আমি আব্বার আদর্শে বেড়ে উঠতে পেরেছি? এটা আমার নিজের কাছে প্রশ্ন।
বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গেলে এমন আবেগের সুরেই কথা বলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা ববিতা।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার উদযাপন করা হয় দিবসটি। যথারীতি আজ সেই দিন।
বাবাকে স্মরণ করে ববিতা বলেন, আমার বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আব্বা এ এস এম নিজাম উদ্দিন আতাইয়ুব ইন্তেকাল করেন। যে কারণে মানসিকভাবে সেই সময় অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। বাবাকে ঘিরে প্রত্যেক সন্তানেরই অনেক স্মৃতি থাকে। আব্বা সবসময় আমাদের ছয় ভাই-বোনকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলতেন। আমার জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। এই যে আমি এত পরিপাটি থাকি, গুছিয়ে থাকার চেষ্টা করি, এটা আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। আব্বা যখন অফিস থেকে আসতেন, তখন আমরা সবাই আব্বাকে পান বানিয়ে খাওয়াতাম। আব্বা তখন বেশ আয়েশ করে পান খেতেন। আব্বার পা টিপে দিতে দিতে তখন সব আবদার করতাম। আব্বা আমাদের সেই আবদার রাখতেন। আবার আব্বা অনেক সিনেমা দেখতেন। সিনেমা দেখে দেখে আমাদেরকে মজার মজার গল্প বলতেন এবং সেই সব গল্পে আব্বা আমাদের অভিনয় করতে বলতেন। সেখান থেকেই কিন্তু অভিনয়ে আমার অনুপ্রেরণা। পরবর্তীতে যখন আমি সিনেমার নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করি, তখনো আব্বা অনেক অনুপ্রেরণা দিতেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অভিনয়ের আগে আব্বাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান করতেন ইংরেজিতে। শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আব্বার চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
কিংবদন্তি এ নায়িকা বলেন, আমার ইংরেজি শেখার খুব শখ ছিল বিধায় আব্বা আমাকে ছোটবেলাতে একটি ডিকশনারি কিনে দিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ি। বাগেরহাটে থাকি। সবাই আমাকে রেখে মামার বাড়ি যাবে বেড়াতে। আমি বুদ্ধি করলাম কীভাবে আব্বাকে রাজি করানো যায়। সন্ধ্যানাগাদ বাসায় ফেরার সময় আমিই হারিকেন নিয়ে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গেলাম। আমাকে দেখে আব্বা ভীষণ খুশি, কারণ তখন বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। আব্বা তখন খুশি হয়ে বললেন কী চাও মা? আমি বললাম আমাকেও মামার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আব্বা রাজি হলেন।
ববিতা বলেন, আব্বা আমার জীবনের আদর্শ। তাই মৃত্যুর পর বনানী কবরস্থানে আব্বার কবরেই যেন আমাকে দাফন করা হয়।
পিডিএসও/নেহাল/হেলাল