সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় : টেনেটুনে পাস করেও শিক্ষক
আবেদনের কোনো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিগত সরকারের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) টেনেটুনে পাস করা একজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মো. ইউসুফকে নজিরবিহীন অনিয়ম ও জালিয়াতি করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক এসএসসিতে সিজিপিএ/জিপিএ ৩.৫০ এবং অঙ্কে সি গ্রেড এবং এইচএসসিতে ৩.০১ এবং ইংরেজিতে ডি গ্রেড পেয়েছেন।
জানা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তির পদের বিবরণীর ‘খ’ তে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) একটি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির (গ) নং শর্তে উল্লেখ করা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড (৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ ন্যূনতম ৪.০ থাকতে হবে।’ এসব শর্ত পূরণ না করেই ওই পদে নিয়োগ পায় মো. ইউসুফ। তার এসএসসি (২০০১) এবং এইচএসসি (২০০৩) পরীক্ষা ৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড পদ্ধতিতে হলেও দুটির একটিতেও সিজিপিএ/জিপিএ ৪.০০ ছিল না। নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক এসএসসিতে সিজিপিএ/জিপিএ ৩.৫০ এবং অঙ্কে ‘সি’ গ্রেড এবং এইচএসসিতে ৩.০১ এবং ইংরেজিতে ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মো. ইউসুফের নিয়োগ পেতে কোনো প্ল্যানিং কমিটি গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট ওই নিয়োগ বাতিল করলেও বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানানোর আইন থাকলেও সেটা কৌশলে এড়িয়ে যায় তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাইকোর্টে রিটের পর রায় নিয়ে মো. ইউসুফ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিভাগে। এ বিষয়ে আপিলও করেনি কর্তৃপক্ষ।
কাগজপত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন লঙ্ঘন করে একটি প্রভাষকের পদ বিজ্ঞাপিত করলেও দুজন প্রার্থীকে এবং অধ্যাপক পদের বিপরীতে একজনসহ মোট তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও অনুমোদিত (স্থায়ী) পদ ছিল কেবল একটি। তবু তিনজনকেই স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, নিয়োগের পুরো লেখাটি টাইপ করা থাকলেও ‘স্থায়ী একটি প্রভাষক পদ’ এর জায়গায় ‘এক’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘তিন’ হাতে লিখে দেওয়া হয়। আবেদনের যোগ্যতা না থাকা মো. ইউসুফকে বাছাই বোর্ড নিয়োগের সুপারিশ করা তিনজনের মধ্যে প্রথম হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু তার নামের আাগে ক্রমিক নং ২ লেখা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্থাপিত নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে ইতিহাসের বিভাগের শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, সার্কুলারে দেওয়া যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শর্তাবলির ‘ঘ’ তে বলা হয়েছে ‘কোনো পরীক্ষায় বি গ্রেড এর নিচে অথবা তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না। এই অনুযায়ী আমি আবেদনের যোগ্য। সেজন্যই আমাকে বাছাই বোর্ড সুপারিশ করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী নীলদল এবং হলুদ দলে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিভিন্ন পদে শুধু স্বাক্ষর করেছিলাম কখনো যাওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসি ড. শওকাত আলী জানান, বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আমি কথা বলব। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।