আশরাফুল ইসলাম, শ্রীপুর (গাজীপুর)
অধ্যক্ষকে নিয়ে এন্তার অভিযোগ তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন
গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল খায়েরের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ। এ ছাড়াও তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের খেয়ালখুশি মতো কলেজ পরিচালনা করে আসছেন। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কমপক্ষে দুটি দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। দুটিতেই ছিল তার তৃতীয় বিভাগ, এ কারণে তিনি ছিলেন আবেদনের অযোগ্য। তবে এ অধ্যক্ষ বলেন, তিনি কোনো অনিয়ম বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত নন।
আবুল খায়ের ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে ১৯৯৫ সালে নিয়োগ পান। নিয়োগ কিন্তু অনার্স ও এমএ পরীক্ষায় দুটিতেই ছিলো তার তৃতীয় বিভাগ। সরকারি বিধি মোতাবেক তিনি ছিলেন আবেদন করার অযোগ্য। তার শিক্ষা-সনদের তাই দেখা যায়, এসএসসি প্রথম বিভাগ (১৯৮২), এইচএসসি দ্বিতীয় বিভাগ (১৯৮৪) স্নøাতক তৃতীয় বিভাগ (১৯৮৬),স্নাতোত্তর পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ (১৯৮৮), বিষয় ইংরেজি। প্রকৃতপক্ষে অত্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন কলিম উদ্দিন মাস্টার। তারপর নিয়োগ পান শাহ আহসান। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষদ্বয়ের নাম মুছে দিয়ে একেএম আবুল খায়েরকে ১৯৯৩ সাল থেকে কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দেখানো হয়। যেহেতু তিনি ১৯৯৫ সালে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তাহলে কীভাবে তিনি প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হন? তার শিক্ষাগত জীবনে দুটি তৃতীয় বিভাগ থাকায় ১৯৯৭ সালে এমপিও ভুক্তি থেকে আইনগতভাবে তার নাম বাদ পড়ে। কিন্তু তৎকালীন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর জোর সুপারিশে তার নাম এমপিও ভুক্ত করা হয়। এ অধ্যক্ষ সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পারান করেছেন তিনি।
তিনি কলেজ ফান্ড পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে যথেচ্ছা ব্যবহার করে আসছেন। বিগত ১৭ বছর যাবত এই কলেজে অডিট হয় না, মন্ত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে সবই ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। তার বিরুদ্ধে কলেজ ফান্ড থেকে কয়েক কোটি টাকা তসরুপের অভিযোগ রয়েছে। অবিলম্বে কলেজটির হিসাব অডিট করার দাবি জানিয়েছেন একাধিক এলাকাবাসি ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এ কলেজে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া পরিসংখ্যান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক বের করে দেন। তিনি ১৭ বছর যাবত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত এবং পরিসংখ্যান বিষয়টা কলেজের পাঠদান থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে উলে¬খ করা হয় যে রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা’র (জাসাস) উপজেলার সভাপতি। কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে তার কোনো আগ্রহ নেই। দলীয় আধিপত্য আর স্বজনপ্রীতির ফলে দিন দিন শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এ কলেজে।
পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আবুল খায়ের এ বিষয়ে বলেন, আমাদের নিয়মিত অডিট হয়, এই কলেজে কোন অনিয়ম নেই। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে ছিলাম, কিন্তু কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে কোনো অনিয়মে যুক্ত ছিলাম না। ১৯৯৩ সালে আমার নিয়োগ হয়, তখন কলেজটি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ছিল, আমার যেহেতু ইংরেজি বিভাগ ছিল, এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা কিছুটা শিথিল ছিল। আমার নিয়োগ অবৈধ নয়।
গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছু-ই জানা নেই তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।