৪ শিক্ষক অপসারণ দাবির আন্দোলনের নৈপথ্যে কে এই ছাত্রলীগ নেতা !
নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ চার শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ব্যানারে চালানো আন্দেলনে নেতৃত্বদানকারী ইমন মুৎসুদ্দি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হলেও সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রীদের সাথে অশুভ আচরণের কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু তার এই বহিষ্কারাদেশ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে সেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মিশে চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তবে তার নেতৃত্বে আন্দোলন যতটা না বেগবান হয়েছে, তার চেয়েও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তার বহিষ্কার নিয়ে । জানা যায়, ইতিমধ্যে নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকায় এই ছাত্রলীগ নেতাকে তিনবার নোটিশ দিয়েছিলো মেডিকেল কলেজ প্রশাসন। কিন্তু নোটিশের তোয়াক্কা না করায় ও সদ্য শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করায় তাকে উক্ত মেডিকেল কলেজ থেকে ২ বছরের বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়। সে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য কৌশলে অধ্যক্ষসহ চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে অপসারণের আন্দোলনে নামে। তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে কটুক্তি করার প্রমাণও রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের সাথে অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় কথা বলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
চতুর্থবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটির সহ সম্পাদক হলেন ইমন মুৎসুদ্দি। তার কথাবার্তা ও আচার-আচরন খুব খারাপ। নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য সে ছাত্র ও ছাত্রীদের দিয়ে আন্দোলন করছে। দীর্ঘ সময়ে আন্দোলনে প্রশাসন তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলেও সে আবার "কমপ্লিট শাটডাউনে"এর নামে নতুন আন্দোলনের সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, সে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে সকল ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করছে। এতে করে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পাঠদানে ক্ষতি হচ্ছে। এ নতুন সরকারের আমলে কলেজ ক্যাম্পাসটাকে অশান্ত করে তুললেও তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সে কৌশলে বৈষম্যবিরোধী সফল ছাত্র আন্দোলনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে ।
চতুর্থবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ইমন মুৎসুদ্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে ৫ আগষ্টের পরে অশ্রাব্য ভাষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছে। এই বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাখ্যা চন্দ্র দাস তার কাছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কটুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে কামাখ্যা চন্দ্র দাসের সাথেও ক্যাম্পাসে অশোভন আচরন করেছে । এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাখ্যা চন্দ্র দাস বলেন, সে একজন ছাত্রলীগের পোস্টেড কর্মী। সে আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েও কটুক্তি করেছে। তার মাধ্যমে ছাত্রলীগ পুনর্বাসন হচ্ছে। আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করায় তাকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি। না হয় আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এই ইমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে শান্ত ক্যাম্পাসটাকে অশান্ত করে তুলেছে। সে নানান অনিয়মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ায় সে এখন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তার স্বার্থ্য হাসিল করেই যাচ্ছে। সার্জারি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ কামরুল হোসাইন বলেন, শিক্ষার্থী ইমন উক্ত মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাকির হোসাইনের বাবা-মায়ের নাম ধরে গালি দিয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিলে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে সবার সম্মুখে গালির বিষয়ে স্বীকার করে। এরপরে উক্ত ছাত্রলীগ নেতা ইমন মুসুদ্দিকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ইমন মুৎসুদ্দি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নানান কথা ছড়ানো হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমি যে পোস্ট করেছি- তা আমি ইতোমধ্যে ডিলিট করে দিয়েছি। আমি এক সময়ে় ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন তো করিনা। এদিকে গতকাল থেকে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ পরিবর্তন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা আগের সাইনবোর্ডটি নামিয়ে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে।