রকি উল হাসান, কুবি
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ১৮ বছরেও হয়নি মন্দির নির্মাণ
কুবিতে প্রার্থনাকক্ষের জন্য ১৪ দিনের সময়সীমা সনাতনী শিক্ষার্থীদের
অস্থায়ী প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) স্থাপনের ১৮ বছরেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মচর্চার জন্য মন্দির নির্মাণ হয়নি। এবার মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। মন্দির নির্মাণের আগ পর্যন্ত একটি অস্থায়ী প্রার্থনাকক্ষের দাবি জানিয়েছেন তারা। এজন্য দুই সপ্তাহের (১৪ দিন) সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
গত সোমবার রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠানো এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার।
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দীর্ঘ ১৮ বছরেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির ও প্রার্থনাকক্ষ স্থাপন হয়নি। প্রতিবছর সরস্বতী পূজা, জন্মাষ্টমী, দীপাবলি, রাধাষ্টমী, হোলি উৎসবসহ প্রতি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক প্রার্থনার জন্য মুক্তমঞ্চ, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়ার কক্ষগুলো ধার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা শহরের মন্দিরগুলো ছাড়া আশপাশে কোনো মন্দির নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মোতাবেক, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী প্রায় ৬০০ জন ও শিক্ষক প্রায় ৩০ জন। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। প্রতিবছরই পুজাসহ ধর্মীয় চর্চায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
রেজিস্টার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বলেছে পূর্ববর্তী প্রশাসনের কাছে একাধিকবার মন্দিরে দাবি তুলেছে। কিন্তু কেন এখনো এটি কার্যকর হয়নি সেটা বলতে পারছি না। এই বিষয়ে এখন আমার কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে আমি তার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব। সনাতনীদের দাবিটি যৌক্তিক, নতুন উপাচার্য যাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়, বিষয়টি সেই ভাবেই তার কাছে উপস্থাপন করব।’
জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বারবার আশ্বাস দিলেও, ক্যাম্পাসে মন্দির বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। প্রশাসন বলছে, নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসে মন্দির থাকবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানান, কবে নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হবে, তারপর মন্দির; সেই আশায় কি তাহলে এখন তারা ধর্মীয় চর্চা বন্ধ রাখব?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে, তবে দুঃখজনকভাবে এখনও মন্দির বা প্রার্থনা কক্ষের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা এরই মধ্যে চারবার আবেদন করেছি, তবু এখনো মন্দির নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ‘অবিলম্বে মন্দির নির্মাণের কাজ হাতে নিতে হবে। মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি অস্থায়ী প্রার্থনা কক্ষ প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সনাতনীদের সব কার্যক্রম পূজা উদযাপন পরিষদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ দাবির পরেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো পর্যন্ত একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় নাই।’
জানতে চাইলে উপাচার্য নিয়োগপূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. জাকির ছায়াদউল্লাহ বলেন, ‘মন্দির নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই, বা দেওয়া হয়নি। আমাকে কিছু সিলেক্টেড বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সনাতনীদের এই দাবির পক্ষে। এ বিষয়ে আমি সনাতনী কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে রাখবো, যেন পরবর্তী উপাচার্য আসলে মন্দিরের কাজটি সহজ হয়ে যায়।’