জাবি প্রতিনিধি

  ১০ আগস্ট, ২০২৩

সাক্ষাৎকার

রাজনীতি হলো সাহস, ধৈর্য এবং ত্যাগের খেলা

—হামজা রহমান অন্তর

হামজা রহমান অন্তর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪১ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে তিনি ছাত্রলীগ নেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কলাম লেখক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয় ও আলোচিত এই নেতা সমসাময়িক, জাতীয় ও দলীয় নানা ইস্যুতে সরব থাকেন সব সময়। ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘ জীবনে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভোলার দৌলতখান উপজেলা, দৌলতখান আবু আব্দুল্লা কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কয়জন ছাত্রনেতা সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন তাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে আলোচিত ও পরিচিত মুখ। তিনি সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন। দ্বীপ জেলা ভোলার দৌলতখানে বেড়ে ওঠা এই ছাত্রনেতা সম্প্রতি প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজের রাজনৈতিক জীবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন জাবি প্রতিনিধি


আলোচনায় থাকার পরও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিগত কমিটিতে প্রথমদিকে পদ পাননি। এবারও ব্যাপক আলোচনায় থাকার পরও ‘প্রত্যাশিত’ পদ পাননি। আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের অভিযোগ, আপনার যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ হয় না। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

আমি মনে করি, শুধু আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নয়, আমার যারা সমালোচনাকারী আছেন বা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে আমাকে যারা চেনেন-জানেন, তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন হামজা রহমান অন্তর নামটির সঙ্গে ছাত্র রাজনীতিতে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার পর আরো দায়িত্বশীল কিছু পাওয়া উচিত ছিল। ছাত্র রাজনীতিতে বয়স হিসেব করলে আমার এখন পড়ন্ত বিকেল। সংগঠন থেকে বিদায় নেওয়ার আগে যে সম্মানজনক বিদায়, রাজনীতির ভাষায় আমরা যাকে বলি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক, সেটা হয়নি এটা যে কেউ স্বীকার করবে। এটা আসলে নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। এতে আমার কোন রাগ-ক্ষোভও নেই। ছাত্রলীগ তো আসলে কিছু পাওয়ার আশায় করিনি। আমি ছাত্রলীগের সেই সময়ের কর্মী ছিলাম, যখন মিছিলে ৩০ জনও পাওয়া যেত না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে একমাত্র আপনিই পদ পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন এখানকার নেতাকর্মীরা। আপনি কী মনে করেন?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু এবার না প্রত্যেকবারই বঞ্চিত করা হয়। এবারের কমিটিতে আমিই একমাত্র, এর আগে রেজওয়ানুল হক চৌধুরি শোভন-গোলাম রাব্বানী কমিটি, ওই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করলে আল নাহিয়ান খান জয়-লেখক ভট্টাচার্য কমিটি, কোনো কমিটিতেই আসলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এর আগে সাইফুর রহমান সোহাগ-এস এম জাকির হোসাইন কমিটি, তার আগে বদিউজ্জামান সোহাগ-সিদ্দিকী নাজমুল আলম কমিটি। আমি বিগত ১৫ বছর ছাত্র রাজনীতি করে যতটুকু দেখেছি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে, আমাদের নেতাকর্মীরা যতটুকু শ্রম দেয়। এত বড় ক্যাম্পাস, এতগুলো আবাসিক হল, এত এত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তাদের মধ্যে আদর্শিক মতাদর্শ প্রচার করে যাচ্ছে এত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েও। আপনি যদি আমার লড়াইটা দেখে থাকেন, বিগত দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মতাদর্শ বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধী মতাদর্শ, আওয়ামী বিরোধী মতাদর্শ অথবা শেখ হাসিনার বিরোধী মতাদর্শ যারাই থাকুক না কেন। বাংলাদেশে তো আসলে শক্তি দুটো- এক হচ্ছে আওয়ামী লীগ আরেকটি হচ্ছে এন্টি আওয়ামী লীগ। একটি হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, আরেকটি হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। বিপক্ষ শক্তিটাই একেক সময় একেক নামে আসে। কখনো মুসলিম লীগ, কখনো বিএনপি, কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো জামায়াত, কখনো গণ অধিকার পরিষদ। এই শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে উত্তরাধিকার সূত্রে আমি এবং আমরা সমানতালে লড়াই করেছি, করে যাচ্ছি। কারো সঙ্গে আসলে তুলনা নয়, অনেকেই আছে যাদেরকে আসলে ব্যাপকভাবে কেউ চেনে না, জানে না, প্রগতিশীল অঙ্গনে যাদের কোনো অবস্থান নেই, যাদের কোনো তৎপরতা ছিল না তারাও প্রত্যাশার চেয়ে বড় পদ পেয়েছে। আমি মনে করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আগেও অবমূল্যায়িত হয়েছে, বর্তমান সময়েও হচ্ছে। এটি নতুন কিছু নয়।

আপনাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক চর্চা হয়। এর মধ্যে নেতিবাচক আলোচনা বেশি। এর কারণ কী?

আমি শুরু করব আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার একটি বাণী দিয়ে। তিনি বলেছেন যে, ‘যদি আলোচনায় থাকতে চাও কখনো সমালোচনাকে ভয় পেওনা।’ আমাদের নেত্রী আরো একটি কথা বলেছেন, ‘যে গাছটার ফল মিষ্টি হয়, তাতে ঢিলটা একটু বেশিই পড়ে।’ হামজা রহমান অন্তরকে বিভিন্ন সময় যারা বিভিন্ন মতাদর্শের ছিল, তারা আসলে কোন মতাদর্শের ছিল সেটা আমি একটু পরে ব্যাখ্যা দিচ্ছি। তারা আমাকে অবহেলা হয়তো করেছে কিন্তু কখনো অপ্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারেনি। আমাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। আমি বরাবরই প্রাসঙ্গিক ছিলাম। আমি মনে করি, আমি যদি ছাত্র রাজনীতি আরো কিছুদিন করি, আমি মনে হয় তাদের মধ্যে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পারব। এটিকে রাজনৈতিকভাবে সফলতায় মনে করি। সড়ক আন্দোলনের সময় ধানমন্ডি পার্টি অফিসে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ মিছিলে স্লোগান দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। আমার মতে, একজন সাহসী মানুষের চেহারা এক হাজার কাপুরুষের তরবারির চেয়েও শক্তিশালী। রাজনীতি হলো সাহস, ধৈর্য্য এবং ত্যাগের খেলা।

২০২১ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে ও পতাকা হাতে বাংলাদেশি কিছু ব্যক্তি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলে তাদের প্রতিরোধে নেমে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। সে সময়কার অভিজ্ঞতা বলুন। ‘পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য’ সংগঠনটির কার্যক্রমই বা কেমন চলছে এখন?

আসলে ওই সংগঠনটি সময়ের প্রয়োজনে গড়ে উঠেছিল। আমি এ রকম বিভিন্ন সংগঠন সময়ের প্রয়োজনে এস্টাবব্লিশ করেছিলাম। ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি মঞ্চ গড়ে তুলেছিলাম। প্রেক্ষাপটটা ছিল সিলেটে ড. জাফর ইকবাল যিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী মহলে একজন প্রিয়মুখ। উনি বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী এবং সারা বিশ্বেই পরিচিত। ড. জাফর ইকবালের উপর যখন হামলা হয় তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল। এর প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন যে ছাত্র নেতৃত্ব ছিল, আমি ছিলাম সহ-সভাপতি। আমার তো ছাত্রলীগের ব্যানারে কোনো প্রোগ্রাম ডাকার অধিকারটুকু নাই। কারণ সেটা শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই করতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। প্রগতিশীল অঙ্গণে একটি আঘাত এসেছে, এই আঘাতটা কয়দিন পরে ছাত্র লীগের উপরে আসবে। এই আঘাতটা কয়দিন পরে আমার কোন ভাই, বন্ধু বা বোনের উপরে আসতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অতীতে শিবিরের হামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে আমরা জেনেছি। তখন কিন্তু আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে নীরব দেখে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে সব শিক্ষার্থী আছেন তাদেরকে নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে একটি প্রতিবাদী গান ও সমাবেশ আয়োজন করেছিলাম। এরকম সংগঠন আমি বিভিন্ন সময়ে করেছি। ২০২১ সালে আবার যখন ঢাকায় দেখলাম যে মিরপুর স্টেডিয়ামে কিছু দর্শক বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান খেলা চলাকালীন পাকিস্তানের পক্ষে প্রকাশ্যে জার্সি-পতাকা নিয়ে উল্লাস করছে। এটি আমাকে চরমভাবে আঘাত দিয়েছে। আমি মনে করি, একজন বাংলাদেশি হিসেবে, একজন বাঙালি হিসেবে এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তার উপর সেটি যদি বাংলাদেশের সঙ্গে হয়। আমি মনে করি, নিজ দেশের বিরুদ্ধে এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। বাংলাদেশে যুগে যুগে ছাত্র জনতাই বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছে। তারই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই কিছু আদর্শিক তরুণকে সাথে নিয়ে আমি মিরপুরে প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথে পতাকা নিয়ে আমরা তাদের ঢুকতে দেয়নি। পরবর্তীতে স্লোগানে স্লোগানে স্টেডিয়াম এলাকা কাঁপিয়ে তাদেরকে বাঁধা দিয়েছিলাম। যাতে কোন ধরণের আক্রমণাত্মক, নৈরাজ্য বা নাশকতা না করে। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটা বার্তা দিতে পেরেছিলাম এই দেশটা বঙ্গবন্ধুর, এই দেশটা মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের, এই দেশটা মুক্তিযুদ্ধে যে সকল মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন তাদের। আমরা এই বার্তাটিই আসলে দিতে চেয়েছিলাম। এরই ধারবাহিকতায় পরবর্তীতে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামেও একই কর্মসূচি দিয়েছিলাম। এটি বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম তো বটেই, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি, সিএনএন, ভয়েজ অব আমেরিকা সহ ভারত এবং পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমরা যারা পড়াশোনা করেছি আমাদের সবারই একটি আবেগের ক্যাম্পাস। একটি ভালোবাসার ক্যাম্পাস। আমি এখনো বলি, অনেক পূণ্য করে জন্মালে হয়তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একাডেমিক পরিবেশ এবং যে রোমান্টিসিজম, যে ভালোবাসা-ভালো লাগার জায়গা সেটার সঙ্গে আসলে ছাত্র রাজনীতির মানটা আমি মনে করি এখনো সমান হতে পারেনি। জাহাঙ্গীরনগরে ক্রিয়াশীল- প্রগতিশীল যেসব ছাত্র সংগঠন আছে তাদের এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এক সময় আমরা দেখেছি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উঠে এসেছিল। জাকসুর সাবেক ভিপি এনামুল হক শামীম ভাই, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরই শুধু সভাপতি ছিলেন না, পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের পারস্পারিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আমরা জানি, তৎকালীন সময়ে ছাত্রদলও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে তাড়াতে ছাত্রলীগকে সমর্থন দিয়েছিল। পরবর্তীতে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে সেই ছাত্রদলের কাঁধেই কিন্তু ইসলামী ছাত্র শিবির ভর করে। যার ফলে ছাত্রদলের সেই গুণগত মানটি কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। ছাত্রদলের একাংশের নেতৃত্ব এখন শিবিরের হাতে। মাঠ যখন ফাঁকা তাকে তখন কিন্তু আর প্রতিযোগিতা হয় না। তখন ইতিবাচক রাজনীতির চর্চার বিপরীতে সেখানে আসলে নেতিবাচকের পাল্লাই ওজনে বেশি হবে। আমি মনে করি, শুধু ছাত্রলীগেরই এটি দায় না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল প্রত্যেকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন সহ যারা আছে সবাইকে পারস্পারিক সম্মান, পারিস্পারিক যে বোঝাপড়া, পারস্পারিক যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এটি গড়ে তুলতে হবে।

রাজনীতি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

রাজনীতি তো করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণমানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। আমারও গণমানুষের জন্য রাজনীতি করার ইচ্ছা। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমি এর আগে আমার এলাকা ভোলার দৌলতখান উপজেলা নদী ভাঙন প্রতিরোধে আমি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য সহ-সভাপতি, খুবই কম বয়স ছিল, তখন কিন্তু আমি ওই বয়সে একটি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রায় ১০ হাজার গণস্বাক্ষর এবং ৫ হাজার চিঠি পৌঁছাতে সক্ষম হই। চিঠিগুলো ছিল দৌলতখানকে মেঘনার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য। সব জায়গায় তো আসলে রাজাকারদের উপস্থিতি থাকে, এখানেও কিছু রাজাকার ছিল যারা এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের হীন প্রচেষ্টা ছিল যাতে আমার উপজেলা রক্ষা না পায়। তাদের বিরুদ্ধেও কিন্তু আমি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়ে এসেছিলাম। তখন কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫৫১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা আমার উপজেলার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল এবং আমার উপজেলা কিন্তু রক্ষা পেয়েছে। আমার উপজেলা দৌলতখানের মূল বাজারে বড় কোনো দালান ছিল না বললেই চলে কারণ সবারই ভয় ছিল নদী ভাঙন। কিন্তু গত ৫ বছরে অনেকগুলো সুবিশাল অট্টালিকা হয়ে গেছে। আমি কিন্তু আমার এলাকার একজন পত্রিকার হকার যিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দুই লক্ষ টাকা এনে দিয়েছিলাম। সিলেটে ছুটে গিয়েছিলাম দুজন স্কুল শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম কিনে দিতে, কারণ তাদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কুমিল্লার চান্দিনায় ডাকাতদের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম বাসের যাত্রীদের রক্ষায়, সেই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াই। আমি যখনই সুযোগ পাই সাধ্যের সবটুকু দিয়ে মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমি রাজনীতি যেহেতু করি, আমার ইচ্ছা আছে গণমানুষের কাছাকাছি যাওয়া, তাদের প্রতিনিধিত্ব করা। যোগ্যতা অনুযায়ী যে পর্যায়েই হোক, যদি কপালে থাকে ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা আছে।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাক্ষাৎকার,হামজা রহমান অন্তর,ছাত্র রাজনীতি,ছাত্রলীগ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close