কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

  ৩১ মে, ২০২৩

কুবিতে সাংবাদিক হেনস্তা, ক্যাম্পাসে মানববন্ধন   

ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারির জের ধরে এক শিক্ষার্থীকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনার কারণ জানতে চাওয়ায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল। তিনি ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগের দাবি, রুদ্র ইকবাল নিজ বিভাগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই দফায় হেনস্তার শিকার হন সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল। তিনি মঙ্গলবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। একই ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেছেন।

মানববন্ধনে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। সাংবাদিকদের কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা। তারই ধারাবাহিতায় রুদ্র ইকবাল সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার ভয়ে ছাত্রলীগ তার ওপর হামলে পড়ে। বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার (২৯ মে) দুপুর ১২টার দিকে ইংরেজি বিভাগে ১৫তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী হীরা ও আরমানের মধ্যে বিভাগেই মারামারির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে আরমান কুমিল্লা শহরে থাকেন আর হীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে থাকেন। মারামারির এক পর্যায়ে হীরা আহত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান জানান, ‘যখন সে আসে তার নাকের ওপরের অংশে রক্ত ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।’

এদিকে হীরার পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিচে জড়ো হন। একই বিভাগ হওয়ায় দুপুর ১টার দিকে রুদ্র ইকবাল পরীক্ষা শেষ করে বের হলে বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাকে ও তার বন্ধুদের বিষয়টি জানান। মারধরের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১৫তম ব্যাচের ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী অনুষদের নিচে অবস্থান নেন।

এরই মধ্যে বিভাগের শিক্ষকরা আরমানকে মূল ফটক থেকে শহরের গাড়িতে তুলে দেন। গাড়িটি আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত গেলে বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা আরমানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। এসময় গুরুতর আহত আরমানকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডিসহ বিভাগের শিক্ষকরা হীরাকে দেখতে এবং বিষয়টি মীমাংসা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যান। একই সময়ে রুদ্র ইকবালও সংবাদ সংগ্রহের জন্য বঙ্গবন্ধু হলে যান। সেখানে শিক্ষকরা মারামারিতে জড়িতদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার এক পর্যায়ে রুদ্র ইকবাল প্রশ্ন তোলেন, ‘বিভাগের মারামারির বিষয়ে কেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীকে মারধর করলেন?’ এতে উপস্থিত ছাত্রলীগের কর্মী অমিত সরকার, আসিফ ইনতাজ রাব্বিসহ অন্যান্য নেতাকর্মী গায়ে হাত তোলার উদ্দেশ্যে ইকবালের দিকে তেড়ে আসেন। পরে ইকবাল সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসেন।

এ ঘটনায় হীরা মিয়া বলেন, ‘শিক্ষকরা যখন আপসের কথা বলছিলেন তখন রুদ্র ইকবাল বলেন মিটমাট কীসের? ওকে (আরমান) তো আবার পেটানো হয়েছে। এসময় তিনি আমার বন্ধুদের দেখিয়ে বলেন, এরা এরা পিটিয়েছিল।’

একই ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই ফের সাংবাদিকদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন রেজা-ই-এলাহি, মাহি হাসনাইন, আমিনুর বিশ্বাস, ওয়াসিফ, আসিফ এন্তাজ রাব্বি, নূরউদ্দিন হোসাইন, রাকিব হোসাইন, রাকেশ দাস, সাদ্দাম, মাহাবুব, মাসুম, নওশীন, রাফি ও অন্যরা। এসময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে তেড়ে আসতেও দেখা যায় তাদেরকে। এদের মধ্যে রেজা-ই-এলাহি ও তার অনুসারী হেনস্তাকারীদের অনেকেরই নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই।

এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজা-ই-এলাহি বলেন, সে (ইকবাল) বলেছে, ‘ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে নাকি ছাত্রলীগ ঢুকতে পারবে না। সে ছাত্রলীগকে দেখে নেবে। তবে আমি সাংবাদিকদের হেনস্তা করিনি। তারা আমাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেছে। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আমার কর্মী নয়।’

এদিকে রুদ্র ইকবালের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রুদ্র ইকবাল রাগান্বিত হয়ে দুই ঠোঁট এক করে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলেছেন এমন মন্তব্য করেন ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড. বনানী বিশ্বাস। এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাকে (রুদ্র ইকবাল) আমি চুপ করতে বলতে শুনেছি।’ এসময় তার অঙ্গভঙ্গি কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ঘটনায় উপস্থিত ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষক মো. আবুল হায়াত বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ইকবাল ‘ছাত্রলীগকে দেখে নেব’ এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করেনি। বরং প্রক্টরসহ উপস্থিত শিক্ষকরা মিটমাটের কথা বললে সে প্রশ্ন তুলেছিল আরমানকে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এটা কীভাবে মিটমাট হয়? এ সময় উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার ওপর চড়াও হয়।

সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব থেকে বিভাগের ইস্যুতে ছাত্রলীগের জড়িত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতেই আমার ওপর হামলে পড়েন।’

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি। বৃহস্পতিবার ১১টায় আমাদের একটা মিটিং আছে। আমরা সেখানে এটা নিয়ে আলোচনা করব।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়,কুবি,সাংবাদিক হেনস্তা,ক্যাম্পাসে মানববন্ধন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close