রাজশাহী ব্যুরো

  ২৪ মে, ২০২৩

রাবিতে বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ভিসি

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে বঙ্গবন্ধু মানবমুক্তির জীবন্ত উদাহরণ তৈরি করেছেন

মঙ্গলবার রাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়েজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

‘বঙ্গবন্ধু সারাজীবন যা করেছেন তা শান্তির পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। শান্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর যে অবিরাম সংগ্রাম তারই একটি স্বীকৃতি এই জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তি। তিনি শুভ চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে বঙ্গবন্ধু মানবমুক্তির এক জীবন্ত উদাহরণ তৈরি করে গেছেন।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।

রাবি উপাচার্য আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার প্রদানের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হচ্ছে, সেটির নকশা করছেন আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর বনি আদম। ফলে আজকের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যাচ্ছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর একদম প্রথমে বলা আছে বিশ্ব শান্তির বার্তা, সেটি হলো একজন মানুষ হিসেবে আমি সমগ্র মানবজাতির কথা ভাবী। এখানেই বঙ্গবন্ধুর বিশ্বচিন্তার প্রতিফলন দেখতে পাই। বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পৃক্ত তা আমায় গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা।

এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে মুখ্য আলোচক ছিলেন রাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাসের উপ-প্রধান গিঅম অড্রেন দে কেড্রেল। রাবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।

মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে বলেন, বিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব ব্যাবস্থায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। একটি হচ্ছে ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সৃষ্টি। ফলে বিশ্ব ব্যাবস্থা দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। এই নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষ থেকে সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী শক্তির বিপরীতে শান্তির অন্বেষা শুরু হয়। এই অবস্থায় ১৯৪৯ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদ গঠিত হয়। সভাপতি ছিলেন জুলিও ও তার স্ত্রীর নাম আইরিন কুরি। তাদের দুজনের নাম মিলে হয় জুলিও কুরি। তারা দুজনই যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তারা দুজনই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছিলেন। আর শৈশবে বঙ্গবন্ধু একটি ব্রতচারী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। মুসলিম লীগের ভেতরে দুটি ধারার সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু মূলত প্রগতিশীল ধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা নতুন দিশা দিতে পেরেছেন। তিনি খুব বেশি সময় পাননি, কিন্তু তিনি পলিসি তৈরি করেছিলেন। তার কন্যা সেগুলো অনুসরণ করে চলছেন। সারা বাংলাদেশে আজকে এই দিবসটি সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ধারণাগুলো যদি আমরা অনুধাবন করতে পারি তাহলে সোনার বাংলা নির্মাণের যে প্রক্রিয়া তা আমরা ধরতে পারবো।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ফরাসি দূতাবাসের উপ-প্রধান গিঅম অড্রেন দে কেড্রেল বিশিষ্ট ফরাসি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত পদার্থবিজ্ঞানী জুলিও কুরির জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোচনা এবং বিশ্ব শান্তিতে তার আকাঙ্খাক্ষা ও অবদান সম্পর্কে আলোচনা করেন। বিশ্ব শান্তির লক্ষে জুলিও কুরির আকাঙ্খাক্ষা ফরাসি সমাজের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ সময় বিশেষ অতিথিবৃন্দ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। আমরা সেই জাতি যে জাতি এমন একজন নেতা পেয়েছিলাম, যিনি শান্তি কামনা করেছেন, এই বাঙালিকে, বাংলাকে মুক্তি দিয়েছিলেন শৃঙ্খল থেকে, বাঙালিকে বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন। সারা বিশ্ব তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন একজন মহামানব হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দসহ প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে এক আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যায়। সেখানে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানবমুক্তি,বঙ্গবন্ধু,‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’,রাবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close