কুবি প্রতিনিধি :

  ০৮ মার্চ, ২০২৩

ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে মারধর, কুবি শিক্ষার্থীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

ছবি : সংগৃহীত।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অপসারণ দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ‘সুষ্ঠু বিচার কইরা দে, না হয় গদি ছাইড়া দে’, ‘প্রক্টরের দুর্নীতি মানি না, মানব না’, ‘প্রক্টরের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘এক দফা-এক দাবি, প্রক্টরের পদত্যাগ চাই’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ —এসব স্লোগান দেয়।

বুধবার (৮ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। এর আগে বুধবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে প্রকাশ্যে মারধর করে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা রনি মজুমদার এবং কুবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাস, অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কাওসার হোসেনসহ ১০-১২ জন নেতাকর্মী।

এতে গুরুতর আহত হন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান হৃদয়, বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহান। এনায়েত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহানের হাত ভেঙে গেলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের সূত্র জানায় রোহানের হাত এবং পা ভেঙে গেছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রলীগের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন, সালমান, সাদ্দাম, সায়েমসহ কয়েকজন আল আমিনের দোকানে বসে নাস্তা করছিলেন। এমন সময়ে রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়।

এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০টায় রেজা-ই এলাহী সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেয়। পরে একজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার এনায়েত উল্লাহ ও সালাম চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এর পরদিনই এই মারধর করার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার যোগসাজেশ রয়েছে বলে অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাস গেটে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতারা জানান, রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাস ও অন্যান্য নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানা সমর্থিত। এ বিষয়ে হত্যা মামলার আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনকল কেটে দেন।

ভুক্তভোগী সালমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে বিপ্লব চন্দ্র দাস ডেকে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে বহিষ্কার করার পরও কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছি জানতে চেয়ে আমাকে এবং হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহকে মারধর শুরু করে।’

এদিকে বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ইন্ধন হিসেবে মন্তব্য করে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসান বিদ্যুৎ বলেন, ‘খুনি বিপ্লব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কীভাবে একজন হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে মারধর করে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধনে তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। যদি যথাযথ সমাধান না আসে তাহলে আমরা প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।’

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর সামনেই শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অস্ত্রের মহড়া দেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরই ফাঁকা গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এ অংশের নেতৃত্বে ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি এবং মারধরকারী বিপ্লব চন্দ্র দাস।

এ বিষয়ে কোটবাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক এস এম আতিকুউল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। বহিরাগতরা যেহেতু হামলা করেছে তাই আমরা তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করব।’

প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কোনো ইন্ধন নেই। যারা এমনটি বলছে তাদেরকে এটা প্রমাণ করতে হবে। প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি, এটা তাদের বিষয়।’

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মহাসড়ক অবরোধ,কুবি শিক্ষার্থী,ছাত্রলীগ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close