হুসাইন মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে ভূতের বাড়ি

ভূত! নাম শুনলেই গা ছমছম করে। ভূতে কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ বিশ্বাস করে না। তবে ভূত কল্পনা করে সবাই কমবেশি ভয় পেয়ে থাকে। সেই ভূতের একটি বাড়ির সন্ধান মেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
দুই দিকে পাহাড়, মাঝে রাস্তা, তার পাশে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে শহীদ মোজাম্মেল হক মিলনায়তন। ভেতর থেকে নাকি কোন এক অশরীরী আত্মার বিকট আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। মিলনায়তনের পাশ দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী যাতায়ত করে কিন্তু তাদের সাহস হয় না ভিতরে যাওয়ার। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার কারণে লোকমুখে ভূতের বাড়ি বা ভূতুড়ে বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
নান্দনিক সৌন্দর্যের এই ভবনটি পরিত্যক্ত থাকায় এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে। তাদের মতামত, এই ভবন সংস্কার করে চালু করা হোক। একাডেমিক বিল্ডিং থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এখানে সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটবে না।
পুরাতন মিলনায়তন সম্পর্কে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শহীদ মোজাম্মেল হক মিলনায়তন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এর বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে এটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। আমি চাই কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এটিকে সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহার করবে।
ভূত সম্পর্কিত বিষয়ে, একজন নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, আমি ওখানে দীর্ঘদিন কাজ করেছি এবং প্রথম দিকে সেখানে বিকট আওয়াজ শুনে ভয় পেতাম। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখি, মিলনায়তনের দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস আসে এবং ওই বাতাস ভবনে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বেরিয়ে যাওয়ার কোন উপায় থাকে না। এতে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়ে বিকট আওয়াজ হয়। এর থেকে ভূতের গল্প সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি।
ভূতুড়ে এই বিল্ডিং সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় মিছিল বের হয়েছিলো। সেখানে পুলিশ গুলি চালিয়েছিলো এবং কয়েকজন ছাত্র মারা যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেগে ওঠে। এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল যখন নিউমার্কেটের কাছে পৌঁছায় তখন পুলিশ গুলি চালায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র মোজাম্মেল নিহত হয়। তার স্মৃতিতে শহীদ মোজাম্মেল মিলনায়তন তৈরি করা হয়।
এই মিলনায়তনের সংস্কার সম্পর্কে জানতে প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজলের (ভারপ্রাপ্ত) কাছে গেলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে লিখিত নিয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস লাবলু বলেন, প্রকৌশল অধিদপ্তরে গেলে আপনি মিলনায়তনটি পরিত্যক্ত থাকার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পিডিএস/এইচএস