মো. সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি :

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বেরোবির পিঠা উৎসবে মিলন মেলা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

সুন্দরী চিতই, পাকন, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, দুধরাজ এত সব পিঠার নাম শুনে জিভে জল না এসে উপায় আছে? এসব তো মাছ-ভাত, খুব সহজে মিলে কিন্তু নাম জানা-অজানা এরকম হাজারো পিঠার সম্ভার একসঙ্গে দেখতে পারাও বেশ ভাগ্যের ব্যাপার। আর সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। সাজিয়েছে সারসারি ৩০টি পিঠার স্টল। সঙ্গে রয়েছে নাম জানা-অজানা ৩ শতাধিক পিঠা।

শীতের পিঠা বাংলার গ্রামীণ জনপদ এক অনন্য আমেজের নাম। শীত এলেই ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা উৎসব, কিন্তু ব্যস্ত শহরে কিংবা শহুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের এই পিঠার স্বাদ পেতে দ্বারস্থ হতে হয় ফুটপাত কিংবা কোনো পিঠার দোকানে। তাই বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের প্রথমবারের মতো এই আয়োজন।

স্টলগুলোতে দেখা মিলেছে :

সাস, নকশি, নসাপটা, বিস্কুট, ফুসকা, চিকেন পুলি, সেমাই, ঝাল, নোনাস, পানতোয়া, গোলাপ, পুডিং, কিমা, জামাই, দুধ, বিন্নী চালের পিঠা, কিমা, ডিম পিঠা, চিকেন পুলি, গুড়ের সন্দেশ, চকলেট পিঠা, কুলশি পিঠা, মিষ্টি পোয়া, ভাপা, হ্দয় হরণ, মেমো, কটকটি, চকলেট, গাজরের লাড্ডু, কানাইপুর, বৌ, বরফি, দুধ চিতই, মিস্টি, কামরাঙ্গা, কুশলি, চালের কলা পাতা, ডিম সুন্দরী, ঋিনুক, ম্যাজিক, ঋাল পুলি, মুগ, পাকাল, নক্ষত্র গুড়গুড়ি, পাকন, নোনতা, দুধ গোকুল, আতিক্কা, আপেল সন্দেশ, শাহি টুকরা, ডিম সুন্দরী, ফিরনী, বৃত্তীয়, মাসরুম, সিজি, পুরভরা, ঝিলমিল, মতিচূর, ফিরিজ পিঠা, সিরিজ, লবঙ্গ লতিকা, শঙ্ক চুশি, গোলাপ জামন, রসায়ন রঙ্গিলা প্যান কেক।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে এই মেলা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। বিষয়টি জানিয়েছেন শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর উমর ফারুক।

প্রথমবারের মতো এই উৎসবের আয়োজন হওয়ায় পিঠা উৎসব আয়োজক কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ, হল ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিভাগ ও হল সমূহের জন্য আয়োজন কমিটি বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দিয়েছে । তবে স্টল সাজানো বা ব্যানারের জন্য পাঁচশত টাকা দিতে হয়। কোনো বিভাগ, হল নিজে এগুলো করতে চাইলে এ ফি প্রযোজ্য নয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, অনন্য সংগঠন (বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাঙ্গন বিভাগের তালিকাভুক্ত) অংশগ্রহণ করতে চাইলে বা স্টল ও ব্যানারের জন্য এক হাজার টাকা ফি আয়োজক কমিটিকে দিতে হয়। প্রতিটি স্টলকে কমপক্ষে পাঁচ রকম পিঠার পরিবেশন করতে হয়।

এ পিঠা উৎসব প্রতিযোগিতায় দুটি বিভাগে পুরস্কৃত করা হবে। পিঠার স্বাদ, সৌন্দর্য ও পরিবেশনা এবং স্টলের সাজ-সজ্জার ওপর। যদিও এ উৎসবে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয় তবে কেউ অংশগ্রহণ করতে চাইলে চারটি করে পিঠা মূল্যয়ন কমিটির কাছে বিকাল ৪টার আগে জমা দিতে হবে। মেলার মধ্যে কোনো চুলা জ্বালানো যাবে না, চুলার জন্য নিদিষ্ট স্থান ছিল। এ ছাড়াও পিঠা উৎসবে ছিল দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশীয় শব্দযন্ত্র, তবলা ও হারমোনিয়াম।

স্টলগুলো হলো : বাংলা বিভাগ , দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ইতিহাস ও প্রত্ত্বতত্ত বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, রসায়ন বিভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গণিত বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, শহীদ মুখতার ইলাহী হল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাত্রকল্যাণ সমিতি, নওগাঁ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি, পাবনা জেলা কল্যাণ সমিতি, গুনগুন (একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন) ও সুপ্রভাত সমাজকল্যাণ সংস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পুলক বলেন, ‘কুয়াশা ঘেরা হিম হিম সকাল কিংবা বিকালবেলায় খেজুরগুড়ের ভাপা পিঠা কিংবা ঝাল সর্ষেভর্তা দিয়ে চিতই কিংবা নারকেল ভরা পাটিসাপটা-পুলি পিঠা খাওয়া দৃশ্য এখন নেই বললেই চলে। আর জাবিথর শিক্ষার্থীদের জীবনে এই দৃশ্য এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। তবে ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে পাওয়া যায় মাটির চুলোয় বানানো ভাপা, চিতই, ডিম চিতই, পুলি, পাটিসাপটা, পাকন পিঠা। এসব পিঠার সঙ্গে চলে আড্ডা-গান আর জীবনের গল্প।’

তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের গল্প লেখার টানে ঘরের আদুরে ছেলে-মেয়েরা, যারা প্রতি শীতে পরিবারের সবার সঙ্গে রোদে বসে পিঠে খাওয়ার দিনগুলো ছেড়ে এই জগৎকে আপন করে নেয় তাদের মনের ভেতরের সেই হাহাকারটাকে কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। এই পিঠেগুলো হয়তো সেই প্রিয় মানুষগুলোর হাতের জাদুভরা হয় না, তবে তীব্র মনখারাপটাকে কমিয়ে দিতে আর স্মৃতিগুলোকে উজ্জ্বল করে নিতে এর তুলনা হয় না।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর উমর ফারুক বলেন, ‘পিঠা হলো বাঙালির একটি এতিহ্য, আর এই এতিহ্যকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চর্চা করার জন্য সকলের অংশীদারিত্বে আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করতেছি। এ উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে থাকা শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ এলাকার পিঠার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং অন্যানা এলাকার পিঠার সাথে পরিচিতি হওয়ার সুযোগ পাবে।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেরোবি,পিঠা উৎসব,মিলন মেলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close