রাবি প্রতিনিধি

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

রাবির বঙ্গবন্ধু হল ক্যান্টিনে বিজ্ঞপ্তি, 'বাকির খাতা পরিশোধ করুন'

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, আমার চলতে কষ্ট হয়। আমাকে ক্যান্টিন চালাতে সহযোগিতা করুন, বাকির খাতা পরিশোধ করুন’- অনুরোধে শফি ভাই। এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিনে টাঙানো একটি বিজ্ঞপ্তি।

হলের ক্যান্টিন মালিক শফিকুল ইসলাম এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন। গত কয়েক মাসে শিক্ষার্থীরা তার ক্যান্টিনে খাবার খেয়ে এক লাখ টাকার বেশি বকেয়া রেখেছেন। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বকেয়া পরিশোধ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি ক্যান্টিনে এই বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের কখনও বাকি দিতে কার্পণ্য করেন না তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছে এই ক্যান্টিনের পরিচালক শফি ভাই এক নামে পরিচিত। বাকি নেওয়ার পর কবে টাকা দেবেন, সেটাও শিক্ষার্থীদের কাছে কখনও জানতে চান না তিনি। শিক্ষার্থীদের ওপর তার দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু এই দৃঢ় বিশ্বাসই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে লাখ টাকার ওপরে বকেয়া জমা পড়েছে। যাদের কাছে বকেয়া পাওনা তাদেরকে অনেকবার বলেছি বকেয়া পরিশোধ করার জন্য। কিন্তু তারা সেভাবে সাড়া দিচ্ছে না। এখন মানুষের কাছ থেকে ধার করে ক্যান্টিন চালাতে হচ্ছে আমাকে। ইতোমধ্যে দোকানে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছি। বকেয়া টাকা না পেলে আমার পরিবারকে পথে বসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জিনিসপত্রের প্রচুর দাম। তবু ক্যান্টিনে কোনো খাবারের দাম বাড়াইনি। আমি সবাইকে নিয়েই বাঁচতে চাই। এমন যেন না হয় শিক্ষার্থীরা আমাকে শেষ করে দিয়ে বাঁচবে।

বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী অভিযোগ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছেলেরাই বাকি খেয়েছে বেশি। রাজনীতি করে না- এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। প্রতি মাসের বাকি টাকা পরের মাসে দিয়ে দিলে আমার এতো কষ্ট হতো না। মাসের পর মাস অতিক্রম হলেও বকেয়া পরিশোধ করে না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কামরুল হাসান অভি বলেন, শফি ভাই অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। ভাইয়া ছাড়া কখনো ডাক দেয় না আমাদের। আমিও মাঝে মাঝে বাকি খাই কিন্তু সময়ে সময়ে তা পরিশোধ করে দিই। এখানে যাঁরা দলীয় পরিচয়ে বা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বাকি খেয়ে বকেয়া পরিশোধ করছে না তারা ঠিক করছেন না। তাদের উচিত শফি ভাইয়ের এমন বিপদের সময় বকেয়া পরিশোধ করে তার পাশে দাঁড়ানো।

শফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। তিনি ১৯৭১ সালের পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার মির্জাপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। পাঁচজন কর্মচারী রয়েছেন তার ক্যান্টিনে। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয় তাদের। তার স্ত্রী ও ছেলেরা ক্যান্টিনে সময় দেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ক্যান্টিন,রাবি,বঙ্গবন্ধু হল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close