মো. আশিকুর রহমান শুভ, ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

ঢাবির জগন্নাথ হলের দুর্গোৎসব যেন সম্প্রীতি মেলা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আশ্বিনের মাঝামাঝিতেও রিমঝিম বৃষ্টি। প্রাকৃতিক এই বাধাকে উপেক্ষা করে সকাল থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্মের মানুষ ভিড় করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূজা মন্ডপে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে শুরু হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন।

দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দুর প্রধান ধর্মীয় উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দুর্গোৎসব ঘিরে বাঙালির মধ্যে গড়ে ওঠে এক সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন।

দুর্গোৎসবকে ঘিরে জগ্ননাথ হল প্রাঙ্গণকে সাজানো হয়েছে রঙ্গিন আলোকসজ্জায়। হলের মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটা দালান, বড় গাছ এবং পুকুরপাড় আলোকমালায় সজ্জিত। লাল, নীল, সবুজ রঙের আলোকসজ্জায় এক অন্যরকম রূপ নিয়েছে জগন্নাথ হলের চারপাশ। রঙের মেলার আবহ, ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনি-শঙ্খের আওয়াজে পূজামণ্ডপ মুখরিত। যেন এক মহোৎসবের জোয়ার বইছে হল প্রাঙ্গণে।

এদিকে জগন্নাথ হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছাত্ররা থাকেন। তবে সনাতন ছাত্রদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার সময় হলের বেশিরভাগ ছাত্ররা পরিবারের সঙ্গে পূজার আনন্দ উদযাপন করতে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু পরীক্ষা, পড়াশুনা ও অন্যান্য কাজে যে ছাত্ররা হলে অবস্থান করে তারাই হল মাতিয়ে রাখে।

এছাড়া পূজার দিনগুলোতে অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরা এই হলে এসে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় দূরদূরান্ত থেকে নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ পূজার দিনগুলোতে পূজা মন্ডপে এসে ভিড় করেন। প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে জগন্নাথ হলে শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপিত হচ্ছে।

সোমবার (৩ অক্টোবর) মহা অষ্টমীর দিনে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, মন্ডপে সকাল বেলায় অঞ্জলি প্রদান ও বিকালে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশের মাঠেই চলছে মেলা। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ট্রেন, নাগরদোলা, চরকি, মিনি ম্যাজিক নৌকা রাইডসহ নানা ধরনের খেলনার দোকান। এ ছাড়া চুড়ি, ব্রেসলেট, কানের দুল, পুঁতির মালা, কাঠের মালা, রকমারি টিপ, নূপুর, ক্লিপসহ অনেক রকমারি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে দোতারা, তবলা, বাঁশের বাঁশি ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এছাড়াও টক-ঝাল-মিষ্টিতে ভরপুর খাবারের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আয়োজন। পূজায় ঘুরতে আসা শিশুরা রয়েছে খেলায় ব্যস্ত আর নারীরা ঘুরে ঘুরে কিনছে পছন্দের পণ্য।

বিক্রেতারা বলছেন, প্রথম দুইদিন বেচাকেনা কম হলেও তৃতীয় দিন থেকে বেড়েছে। নবমী ও দশমীর দিন বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

জগন্নাথ হলে পূজা করতে আসা তপা বিশ্বাস বলেন, দুর্গোৎসবের আচার অনুষ্ঠান শুধু আমাদের, কিন্তু উৎসব সবার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মন্দিরে আসছেন। উৎসবে সামিল হয়ে সবাই এক হয়ে আনন্দ করছেন। এই সম্প্রীতির চিত্রটিই তো বাংলাদেশকে তুলে ধরে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জগন্নাথ হল,দুর্গোৎসব,সম্প্রীতি মেলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close