নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইডেন কলেজের অবস্থা অপরিবর্তিত, উদ্বেগ

ফাইল ছবি

ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে গত কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এরপরই ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী পক্ষের ১৬ নেত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃতরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের বিষয়ে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সে জন্যই তারা ‘শান্ত’ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছিলেন। তবে এ ধরনের ঘটনায় কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে এখনো উদ্বেগ কাজ করছে বলে জানা গেছে। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের প্রতিবাদে এবং বহিষ্কৃত নেত্রীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইডেন কলেজের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার অনুসারীসহ শতাধিক শিক্ষার্থীকে মুখ ঢেকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। সবশেষে কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করতে ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে কলেজ প্রশাসন।

মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। তবে কমিটিতে কারা রয়েছেন বা কত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা পড়বে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির বিষয়ে অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, সংঘর্ষের কারণ জানতে ২৫ সেপ্টেম্বর কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য চার শিক্ষক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে ইডেন কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও সুন্দর রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করছেন। এ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে গণমাধ্যমে যারা রয়েছেন তাদের সহযোগিতা করতে হবে। আমরা কলেজ ছুটি বা হল বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। অফিসিয়াল যেকোনো সিদ্ধান্ত নোটিসের মাধ্যমে জানানো হবে।’

বহিষ্কৃত নেত্রীদের নেতৃত্বে থাকা এক নেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা যখন ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাই, তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সেখানে ছিলেন। একটু পরই সায়েম খান চলে যান। পরে সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম আমাদের বলেন, তার সঙ্গে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম নেতা) কথা হয়েছে। নাছিম ভাই বলেছেন, ওদের যেতে বলো, ওদের ব্যাপারটা আমরা দেখছি, ওদের দায়িত্ব আমাদের, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এটা বলার পর তো ওখানে আর থাকা যায় না। এ জন্য আমরা সেখান থেকে চলে আসি। তবে নাছিম ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো কথা হয়নি।

গত সোমবার রাতে বহিষ্কৃত কয়েকজন নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠতম নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দেখা করেন। এক নেত্রী বলেন, তিনি (নানক) আমাদের বলেছেন, তোমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার কাছে লিখিত দরখাস্ত দাও, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করো, আমরা এক জায়গায় বসে তোমাদের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলব।

মঙ্গলবার মানববন্ধনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ১৬ নেত্রীর প্রশাসনিক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের কাছে তাদের নাম প্রকাশের বিষয়টি গোপন রেখে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ও এসব অভিযোগের কারণে তাদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া খোদেজা খাতুন হলে তার রুম নম্বর ৩০৯ বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোদেজা খাতুন হলের ৩০৯ নম্বর রুমে থাকেন সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। এ শিক্ষার্থী রাজিয়ার অনুসারী বলে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। ঐশ্বর্য মালাকার নামের এক শিক্ষার্থীকে মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। তিনি রাজিয়া হলের ২০৪ নম্বর রুমে থাকেন। এ রুমটি সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার নিয়ন্ত্রণাধীন বলে জানা যায়।

মানববন্ধন শেষে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস নির্যাতনের অভিযোগ এনে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা, সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এরপর থেকে দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর জের ধরে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজ ছাত্রলীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইডেন কলেজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close