যবিপ্রবি প্রতিনিধি
যবিপ্রবির একাডেমিক ভবনের লিফট যেন মরণফাঁদ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের লিফট যেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। প্রায়ই এই লিফটে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। গতকাল প্রায় ২৪ মিনিট লিফটে আটকা পড়েন যবিপ্রবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও এপিপিটি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। একই ভাবে আটকা পড়েছেন ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যা, সহ আরও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন , গতকাল সকাল ৮ টা ৩৫ মিনিটে আমি লিফটে উঠে ছিলাম ছয় তলার উদ্দেশে। লিফটে ওঠার পরপরই একটি বিকট শব্দ হয়। আমি প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এরআগে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমি আটকা একবার পড়ি, ভেবেছিলাম আগেরবারের মতো কিছু সময় পর লিফট সচল হবে। কিন্তু এইবার এইরকম কিছু হল না, একাধিকবার বোতাম চাপলেও লিফটের দরজা খুলেনি। এভাবে প্রায় চার পাঁচ মিনিট হয়ে গেলে যখন লিফট চালু বা লিফটের দরজা না খোলার পর আমি বেশ ঘাবড়ে যাই। এরপর আমি ইঞ্জিনিয়ার মিজান সাহেবকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু তিনি ফোন ধরেন না । পরবর্তীতে আমি প্রধান প্রকৌশলী আনিস স্যারকে ফোনে আমার ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাই।
এরপর তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেন ,আমরা আপনাকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠাচ্ছি। এরপর বেশকিছু সময় অতিবাহিত হলে যখন প্রধান প্রকৌশলী আনিস স্যারের কোন উত্তর না এসে তখন আমি আমি বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের জন্য কথা বলি। একসময় আমি উপায় না পেয়ে উপাচার্য মহোদয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কয়েকবার চেষ্টা করার পর উপাচার্য স্যারের সাথে যোগাযোগ হলে আমি তাকে আমার এই বিপর্যয়ের কথা জানাই। তিনি আমাকে ধৈর্য ধারণ করে শান্ত থাকতে বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এরপর আমি আমার পিওন প্রিন্সকে মোবাইল ফোনে আমার অবস্থার কথা জানালে তিনিও পথিমধ্যে মেকানিকের সাথে দেখা হলে তাদের সঙ্গে আসে। এসময় ফোনে তারা আমার অবস্থান জানতে চান। লিফটে আমার অবস্থান তিন দেখালেও তারা আমাকে তিন তলায় খুঁজে পায় না পরবর্তীতে চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় দরজা খুলে তারা আমাকে পঞ্চম তলায় পান। আমার এবং লিফটের অবস্থান ছিল পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলার প্রায় মাঝামাঝি। আমার আর ষষ্ঠ তলার লিফটের মধ্যে প্রায় একহাত জায়গা ফাঁকা ছিল। কোনরকম দরজা খুলে তারা আমার সাথে কথা বলে এবং ধৈর্যধারণ করতে বলেন। পরবর্তীতে তারা নয় তলায় গিয়ে লিফটের সুইচ অফ করে আবার লিফট নতুন করে চালু করে এবং তার কিছুক্ষণ পর লিফট সচল হয়।
তিনি আরো বলেন, আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ২৪ মিনিট ছিলাম। এই ঘটনার ১২ থেকে ১৫ মিনিট পর আমি আর আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। এই সময় আমি চোখ বন্ধ করে শুধু ঈশ্বরের নাম নিয়েছি। আমাদের একাডেমিক ভবনের লিফটের সার্ভিস মোটেও সন্তোষজনক না। লিফটে উঠলে প্রায়ই ঝাঁকুনি অনুভব করি, তাছাড়াও প্রায়ই শিক্ষক শিক্ষার্থীরা লিফটে আটকে পড়ে। আমি যখন লিফট থেকে বের হয়েছি আমার মনে হয়েছে আমি যেন এক নতুন জীবন পেয়েছি। এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যেন কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী না হতে হয়।
এ বিষয়ে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যা বলেন, আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ৭ থেকে ৮ মিনিট আটকে ছিলাম। আমি যথারীতি ঘাবড়ে যাই, আমার জায়গায় যদি কোন শিক্ষার্থী আটকে পড়তো তাহলে তার মানসিক অবস্থা কেমন হতো?? এর আগে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা সেটা তারাই ভালো জানেন।
তিনি আরও বলেন, আর কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যেন এই ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হতে হয় এবং যতদ্রুত সম্ভব প্রশাসন যেন এটি মেরামত ও মেন্টেনেন্সের দায়িত্ব নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ও লিফট মেন্টেনেন্সের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, এবিষয়ে আমি তো ভালো বুঝি না তবে মেইনটেনেন্স না করার জন্য হয়তো এ সমস্যা গুলো হচ্ছে। কিছু সমস্যার কারণে সিকিউরিটি মানি না দেওয়ায় গত ৩ মাস কেউ মেইনটেনেন্স করতে আসেনি। তবে আজকের মিটিংয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আশা করি।