রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিয়মিত সকল শিক্ষার্থীদের জীবন ও স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা কাঠামোর আদলে প্রিমিয়াম ও বীমার পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে একটি কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পাশ হয়েছে বিষয়টি। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র আরও জানায়, গত অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০৭তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন পেয়েছে শিক্ষার্থীদের বীমা পরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লিয়াকত আলী , ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তারেক নূর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ, একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ.এইচ.এম আসলাম হোসেনসহ আরও দু’জন।

ইতিমধ্যে একটি মিটিং করেছে কমিটি। বীমা সম্পর্কিত নীতিমালা নির্ধারণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে তারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করতে চায় কমিটি।

কেমন হবে প্রিমিয়ামের পরিমাণ: কমিটির সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, বছরে ২৭০ টাকার কিছু কমবেশি প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হতে পারে শিক্ষার্থী প্রতি। তবে এক্ষেত্রে মডেল হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া বীমা পলিসি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছেন তারা।

নীতিনির্ধারক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়ানো-কমানোর উপর নির্ভর করবে বিনিময়ে কী পরিমাণ সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা।

বিনিময়ে কী পাবে শিক্ষার্থীরা: বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এককালীন প্রিমিয়াম জমা নেয়ার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর বিনিময়ে জীবন বীমার আওতায় থাকা কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলে তার পরিবার সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পাবেন। আর স্বাস্থ্যবীমার আওতায় কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা পাবেন। আবার বীমার আওতায় থাকা অসুস্থ হওয়া কোনো শিক্ষার্থী যদি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা নেয় সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা পাবেন।

তবে এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, হাসপাতালের বিলের কাগজ পত্র অথবা ভাউচার জমা দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এসব এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে প্রিমিয়াম ও বীমার পরিমাণ বাড়ানো-কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এ সম্পর্কিত টেন্ডার আহ্বান করার পর যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় প্রশাসন।

কোথায় কীভাবে: বীমা সম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটি দপ্তর চালু করার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। এরজন্য টেন্ডারের ভিত্তিতে কোনো একটি বীমা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হবে বীমা কার্যক্রম পরিচালনা করার। আবার শিক্ষার্থীদের যেন বীমার টাকা পেতে কোম্পানির কাছে ধরনা দিতে না হয় সেজন্য একটি দপ্তর থেকে পরিচালনা করা হবে এ সম্পর্কিত কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ.এইচ.এম আসলাম হোসেন বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় সুখবর। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জটিল রোগসহ নানা সময়ে অসুস্থ হলে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করতো। আমরা তাদের জন্য যতদ্রুত সময়ে সম্ভব বীমার টাকা বুঝিয়ে দিতে কাজ করছি। যদি সেটা ৭ দিনেরও কম সময়ে সম্ভব হয় আমরা তা করতে বদ্ধপরিকর।

এদিকে, সংকটকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে আর্থিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের জন্য গোষ্ঠী স্বাস্থ্যবীমা চালু করার দাবি জানিয়েছিলেন রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। চলতি বছরের ৭ নবেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেন তারা। তবে এর আগেই অক্টোবর মাসে বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। আর আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বীমার আওতায় আনে প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের জন্য জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা চালু করার পরিকল্পনা জানতে পেরে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সাধারণ বা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করতো। এখনো দেখা যায় অসুস্থ শিক্ষার্থীর জন্য বক্স হাতে মানুষের কাছে টাকা তুলতে। বীমা সুবিধা চালু হলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন তারা।