reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ মার্চ, ২০২১

অন্যায়ভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে : সামিয়া রহমান

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি দেওয়ার ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমান। তার দাবি, তাকে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। বলির পাঁঠা হতে হয়েছে তাকে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সামিয়া রহমান বলেন, বলির পাঁঠা হয়েছি আমি। ট্রাইব্যুনাল নিজে বলেছে, ন্যায় বিচার হয়নি। তারা এমন সুপারিশ করেনি। সামিয়া ন্যায় বিচার পায়নি। গবেষণায় নকলের অভিযোগে পদাবনতি ষড়যন্ত্রমূলক। ক্ষমতার বলে যে যার মতো তথ্য দিচ্ছে। এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট, সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।

২৮ জানুয়ারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির শাস্তি হিসেবে এই সিদ্ধান্ত বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

সামিয়া রহমান বলেন, এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল। তাদের শাস্তি হয় না, কারণ তারা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, প্রতিহিংসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন, এটা চৌর্যবৃত্তি না। লেখকদের সতর্ক করে দেওয়া হোক। ট্রাইব্যুানাল বলছে, এটা মেথোটিক্যাল এরর। তাহলে সিন্ডিকেট কার সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নিলো।

সামিয়া রহমান বলেন, গত চার বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে আসছেন। আমার পক্ষ থেকে কেনও বক্তব্য পাননি। এর ব্যাখ্যা আছে। আমার এবং মারজানের নামে অভিযোগ আসে। এই অভিযোগ নিয়ে হইহই পড়ে যায়।

তিনি বলেন, যেখান থেকে এই চিঠি এসেছে, সেই মার্টিনা বলে কেউ নেই। শিকাগো জার্নাল এই চিঠিটি পাঠায়নি বলে তারাই স্বীকার করেছে। এই চিঠিটিতে দেখুন চিঠিটি কোথা থেকে প্রিন্ট হয়েছে। এই চিঠিটি সম্পর্ণূ মিথ্য বানোয়াট ও তৈরি করা। আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। আমি ভেঙে পড়িনি কখনই। অন্যায় হয়েছে, ন্যায় বিচার পাইনি।

সামিয়া বলেন, এই মেইলের কোনও অস্তিত্ব নেই। এমনকি ট্রাইব্যুনালের জানিয়েছে এই চিঠিটি সন্দেহজনক। এটার সাথে আমি জড়িতই ছিলাম না। একটা মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে তদন্ত হলে, শাস্তি দেওয়া হলে আপনারাই বলুন এটা কি ষড়যন্ত্রমূলক নয়। সে কী অন্যায় নয়?

তিনি বলেন, আমি চার বছর ধরে কেন কথা বলিনি! আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হুমকি ধামকির মধ্য ছিলাম। আমাকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে আমাকে চাকরি ছাড়তে। আমি যেন চাকরি ছেড়ে চলে যাই।

সামিয়া বলেন, আমি প্রমাণ করব, আমি অন্যায় করিনি। যে চিঠি আমি লিখিনি, আমি জমা দিইনি। সে লেখাটি আমি কেন আমার বলে দাবি করব। গবেষণার আইডিয়া করা, আর গবেষণা করা এক বিষয় নয়। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ চার বছর ধরে বিষেদগার করেছে, তারাও প্রমাণ দিতে পারেনি।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : আ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে।

অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মতো হুবহু নকল করেছেন তারা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

অভিযোগটি তদন্তে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা পাওয়ার কথা জানানো হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সামিয়া রহমান,গবেষণা,শিক্ষক,ঢাবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close