অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, খুবি
বিশেষ প্রতিবেদন
অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা না সেশনজট? কি বলছে শিক্ষার্থীরা
সৈকত রায় মিশু, সংস্কৃত ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- সেশনজট শব্দটি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য একটি দূর্বিসহ নাম। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সখ্যতা অনেকদিনের। দুই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোর মোটা দাগে লেজে গোবরে অবস্থা। ভয়াবহ মহামারি করোনার কারনে সেই সমস্যা আরও ঘনীভূত হল। এই সমস্যা থেকে কিছুটা উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও একটি মুদ্রার মত এর উভয়দিক রয়েছে। গতানুগতিক ক্লাসের থেকে এটায় অল্প কসরত ও সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি এটা রেকর্ডেড থাকায় যে কোন শিক্ষার্থী তার সময়ানুযায়ী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু বিপরীত চিত্র হচ্ছে আমাদের যে গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি তার সত্যপরায়ণতা নিশ্চিত করা কিছুটা জটিল। তবে ‘ওপেন বুক এক্সাম’ পদ্ধতিতে যদি পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে এই সমস্যা সমাধান সহজেই সম্ভব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ‘ওপেন বুক এক্সাম’ পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল স্পিরিটকে সমর্থন করে। যদিও অনলাইন ক্লাসের মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়। একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ইনফো-সরকার-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ইতোমধ্যে দেশের ৮৫ ভাগ ইউনিয়নে (৩৭১৮ টি ইউনিয়ন) ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউজিসির এই সিদ্ধান্ত সেশনজট নামক ব্লাকহোল থেকে কিছুটা হলেও উচ্চশিক্ষার্থীদের পরিত্রাণ দিতে পারে এবং এটি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একটি মাস্টারস্ট্রোক।
মারুফা এমি, প্রত্নতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়- বর্তমানে করোনা সর্তকতায় দেশের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আশংকা করা হয় এই বন্ধ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। পাশাপাশি বন্ধ আছে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। ফলে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়িতে, শহরে অথবা গ্রামে অবস্থান করছে। এই দীর্ঘায়িত ছুটির ফলে শিক্ষার্থীরা সেশন জটের শঙ্কায় আছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে যা অত্যান্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এতে সকল শিক্ষার্থী সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা গ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের যে কোনো নেটওয়ার্ক পেতে হলে বেগ পেতে হয়।সেখানে ইন্টারনেটের সুবিধা নেই বললেই চলে। আবার অনেক শিক্ষার্থী আর্থিকভাবেও প্রস্তুত নয় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অংশ নিতে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন সেশন জটের আশংকা রয়েছে তেমনি রয়েছে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে দুশ্চিন্তা। তাই আশা করি সেশনজট দূরীকরণে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও যাদের অংশগ্রহণের সক্ষমতা নেই তাদের জন্য যেন এমন পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
দিদার ইসলাম বুলবুল, পদার্থবিদ্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়- আগের ইয়ারে খুব একটা ভালো পরীক্ষা দিতে পারিনি। এভারেজ একটা রেজাল্ট করব সেই আশাতেই আছি। এই বছর ক্লাসের শুরুতেই চিন্তা করলাম আর না। এখনই লেখাপড়ার লাগাম টেনার সময়। ১৫ দিনও ক্লাস করতে পারি নি। এরই মধ্যে মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু। চবির পদার্থ বিদ্যার একজন ছাত্র আমি (ব্যাচ ১৭-১৮)। একদিকে সেকেন্ড টাইম ট্রাই করার জন্য একবছর লস আবার অন্যদিকে আমাদের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের সেশনজট । এই তো গত ১ম বর্ষের পরীক্ষাই শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। ভালো কিছুর প্রত্যাশায় সামনে আগাতে চাইলেও বর্তমান পরিস্থিতি আমার অনুক‚লে না। আমার এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই আছে। গত ২মাস যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সব বন্ধ। যেখানে মানুষ বাঁচবে কিনা সেই দুশ্চিন্তা সেখানে সব শিক্ষার্থীর মনে একটাইই ভয় সেশনজট। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিপর্যয় কাটানোর জন্য অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে রোজকার মতো। যা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যেগ। এদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শহরমুখী হওয়ায় তেমন অসুবিধাও হচ্ছে না। শুনেছি পাবলিক ভার্সিটর শিক্ষকরাও একমতে আসার চেষ্টা করছেন এই লাইনে ঢুকবে বলে। কিন্তু আমরা যদি খেয়াল করি, দেখবো পাবলিক ভার্সিটিগুলো অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর বসবাস বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। যেখানে মোবাইলে কথা বলাই কষ্টসাধ্য সেখানে ইন্টারনেট তো বিলাসিতা; সাথে ইন্টারনেট বিল তো আছেই। আর ব্যবহারিক ভিত্তিক যে সাবজেক্টগুলো আছে তাতে অনলাইন ক্লাস তেমন একটা কার্যকরি হবে বলে মনে হয় না।
এখন আমার মতো ইয়ার লস করে যারা স্টাডি কন্টিনিউ করছে তাদের জন্য এরকম পরিস্থিতি সত্যিই চিন্তার বিষয়। শুধু আমাদেরই না, যেসব শিক্ষার্থীরা ইয়ার ক্রাশ বা স্পেশাল এক্সাম দিচ্ছেন তাদের জীবনেও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সবশেষে প্রশাসনের নিকট একটাই চাওয়া সেশনজটের প্রতিক‚লতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোন বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা করা।
অর্পণ দাস, কৃষি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- প্রায় ২ মাস ধরে করোনার প্রাদুর্ভাবে যখন দেশের সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাই অচল তখন একদিকে যেমন চলছে জীবন-মৃত্যুর খেলা আরেকদিকে শিক্ষার্থীদের চিন্তা সেশন জট নিয়ে। ক্লাস বন্ধের পাশাপাশি আবাসিক হলগুলো খালি করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। সব শিক্ষার্থীই তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক অনলাইন ক্লাস করার আহ্বান জানান, যেটি একটি ভাল উদ্যোগ হলেও সব শিক্ষার্থী তাতে একাত্মতা ঘোষণা করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ এসেছে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে যেখানে এখনো ইন্টারনেটের সুবিধা নেই বললেই চলে। যেখানে ঘরের মধ্যে বসে মোবাইলে নেটওয়ার্কই পাওয়া যায় না, মোবাইলে কথোপকথনের জন্য তাদেরকে ঘর থেকে বেড়িয়ে খোলা স্থানে এসে নেটওয়ার্কের সন্ধান করতে হয় সেখানে তাদের পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা প্রকৃতপক্ষে সম্ভবও নয়। সাথে ইন্টারনেটের মেগাবাইট কেনার খরচ তো রয়েছেই। সেটিও সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে টেকনিকাল ভার্সিটি গুলোতে যেখানে সব কিছু ব্যবহারিক ভিত্তিক সেখানে অনলাইন ক্লাস কতটা কার্যকরি হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তাই সকল শিক্ষার্থীই বিকল্প কোন পদ্ধতির আশা করছে এই সেশন জটের প্রতিক‚লতা কাটিয়ে উঠতে।
ইমরান মোঃ আজিজুল ইসলাম, পুরকৌশল বিভাগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- বিশ্বব্যাপী ছড়ানো মহামারি কভিড -১৯ শিক্ষাখাতকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি অনেকভাবে। তবে এ বিষয়ে ইউজিসির নেয়া সিদ্ধান্তকে দুই ভাবে দেখা যায়।
প্রথমত একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি অনলাইন ক্লাস এর সম্পুর্ন বিপক্ষে, কারন ও ভাবনা গুলো নিচে জানাচ্ছি।
প্রথমত এই অনলাইন ক্লাস এর আইডিয়া বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হলো , ইন্টারনেট সংকট। কিভাবে? অনেকেই গ্রামের বাড়ীতে চলে এসেছে এবং পর্যাপ্ত নেটের সুবিধা বা ওয়াইফাই তাদের নেই এবং অনেকের গ্রামে নেট স্পিডও স্লো, তাই শহরে যারা থাকে তারা সুবিধা পেলেও গ্রামে থাকা অধিকাংশই বঞ্চিত হবে এই সুবিধা থেকে।
দ্বিতীয় কারন, প্রকৌশল শিক্ষার ৫০% এর মতন কোর্স থাকে ল্যাব সেশোনাল যা অনলাইনে কখনোই করা সম্ভব না।
পরে আসে পরীক্ষা। অনলাইনে পরীক্ষা নিলে তা ঠিক কিভাবে হবে তা জানা জরুরি। কেননা, এমসিকিউ দিয়ে এই পর্যায়ের মুল্যায়ন (বিশেষ করে প্রকৌশল শিক্ষার সম্বভ নয় বলেই আমি মনে করি।)
আর সেশন জটের ব্যাপারটাকে পরের সেমিস্টার গুলো ছোট করে এড়ানো সম্ভব বলে আমার মনে হয়।
নিলয় সরকার, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়- করোনা ভাইরাসের কারনে থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। বন্ধ হয়ে গেছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় উচ্চশিক্ষায় দেখা দিয়েছে সেশন জট।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন এই সেশন জট নিরশনে অনলাইন ক্লাস পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু এখন সত্যি বলতে সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে এই ডাটা খরচ করা সম্ভব হবে না,তাছাড়া অনেকের হয়তো অনলাইন ক্লাস করার মত ইলেকট্রনিক ডিভাইসটাও নেই। এমন অবস্থায় অনলাইন ক্লাস করা আসলেই অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব। অপরদিকে দীর্ঘ সময় লকডাউনে থাকলে আমরা পড়ব ৬ মাসের সেশন জটে। পৃথিবীর অবস্থা ঠিক হলে আমরা হয়তো বেশি ক্লাস করে, সরকারি ছুটি কমিয়ে এনে এই জটটা হয়তো কভার করতে পারব।
তাই এখন সকল শিক্ষার্থীর দরকার পাশে দাঁড়ানোর, হয়ত অনেককেই না খেয়ে দিন পার করছে তাদের কাছে অনলাইন ক্লাস মোবাইল ডাটা কিনে করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না।
অন্বেষা বিশ্বাস, আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়- করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। স্থবির হয়ে পড়ে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে আমরা সেশন জটের আশংকা করছি। উপরন্তু "সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে" প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর আমরা আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। সেশনজট এর কথা মাথায় রেখে অনেক সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে।
যদিও বর্তমান সময়ের মতো যেকোনো জরুরী অবস্থায় প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ তবে এই মহামারীর সময়ে অনলাইন ক্লাস নিয়ে আমি বেশ দ্বিধান্বিতই বটে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই অসচ্ছল যাদের জন্য মোবাইল ডেটা খরচ করে অনলাইন ক্লাস করা এখন নিছক বিলাসিতা।উপরন্তু এই অস্থির সময়ের আঘাতে তারা মানসিকভাবে পড়াশুনার জন্য কতটা প্রস্তুত সেটাও ভাবার বিষয়। প্রযুক্তির সমন্বয় সেশনজট কিছুটা হলেও হয়তো প্রশমিত করতে পারে এবং বর্তমানে তরুণ সমাজের ইন্টারনেট এবং অনলাইনের ওপর প্রবল ঝোঁক ভালো কাজে লাগানোরো এটি একটি সুযোগ।
তবুও এটা সত্য যে "অনলাইন ক্লাস" আমাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। যেহেতু অনেক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই; পাশাপাশি আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই "অনলাইন ক্লাসের" সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
অনলাইন ক্লাসে আরো কিছু জটিলতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে:
প্রথমত, এখন অনেক শিক্ষার্থী নিজ গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির অসুবিধা রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক সময় মোবাইল নেটওয়ার্কই থাকে না, উচ্চগতির ইন্টারনেট তো দূরের কথা।
দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকেই টিউশনের উপর নির্ভর করে চলতে হতো। এখন টিউশন নেই, তাই বলা চলে, তাদের "পকেট ফাঁকা।" উচ্চ মূল্যে ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্য তাদের এই মুহূর্তে নেই।
এছাড়াও, অনলাইন ক্লাসে শুধুমাত্র তত্বীয় ক্লাস নেয়া সম্ভব। যেহেতু ব্যবহারিক ক্লাস কিংবা পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয় তাই সেশনজট কমাতে অনলাইন ক্লাস কতটুকু কার্যকর প্রশ্ন থেকে যায়।
যুবায়ের আহমেদ, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- সারাবিশ্বে মহামারীর প্রকোপে জনজীবন বিপন্ন। শিক্ষা কার্যকম ও ব্যাহত হচ্ছে। ১৭ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খুব শীঘ্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে এমন কোনো আশা ও করা যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে লাখ-লাখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা ও ক্লাস কার্যক্রম চলমান কিন্তু আমাদের মতো টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অনলাইনে শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চালানো একটু মুশকিলের ব্যাপার কারন আমাদের শিক্ষা-কার্যক্রম অনেকটা মাঠ ও ল্যাব নির্ভর। তাই অনলাইনে শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চালালে আমাদের ভালো বেগ পেতে হবে।
সাদিয়া আফরোজ, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- বর্তমানে আমরা একটা রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতে আটকে আছি। আমরা জানি না এই পরিস্থিতির শেষ কখন কোথায়! করোনা ভাইরাসে পুরো পৃথিবী এখন গৃহবন্দী,সাথে পুরো বাংলাদেশ তো বটেই। এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অচল পুরোপুরি। আমাদের হাতে এখন দুটো অপশন। সেখানে হয় অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস-পরীক্ষা না হয় সেশন জট। বর্তমানে আমরা দেখতে পাই , বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলো অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষাকে ফলো করলেও পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলো পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য অনলাইন ভিত্তিক পড়াশুনা অনেকটা কষ্টসাধ্য। আমরা অনলাইন ক্লাস করা শুরু করলে দেখা যাবে আমাদের ক্লাসের ৪০% স্টুডেন্টই সেখানে অনুপস্থিত। কারন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে থাকে,তাদের অনেকের এলাকায় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা হয়তো ওতোটা উন্নত নয় বা পরিবারিক অবস্থাও অনেকের এতোটা ভালো না যে এখন পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা পিছে ফেলে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হবে। আর আমরা ৬০% স্টুডেন্টরা চাই না আমাদের বাকি ৪০% সহপাঠীদের ছাড়াই ক্লাস চালিয়ে যেতে। সেখানে আমাদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া কোনো গতি নেই। কিন্তু ঘরে বসে অনলাইন ভিত্তিক পড়াশুনা বা জ্ঞান বিস্তারে সমর্থন জানাচ্ছি।