জাককানইবি প্রতিনিধি
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং, হাসপাতালে ২ শিক্ষার্থী
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বাহিরে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, গতকাল বৃৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেকপোস্টের পাশে একটি ছাত্রী নিবাসে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফারহানা রহমান লিয়োনা’কে ম্যানার শেখানোর নামে মাত্রাতিরিক্ত র্যাগিং করায় মানসিক চাপে মাথা ঘুরে পরে যায় তিনি। প্রথমে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
একাধিকবার র্যাগিংয়ের শিকার কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞান হয়ে পরায় ও শরীলে খিচুনী শুরু হলে তাকেও প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সে এখন হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসারত শিক্ষার্থীদের দেখতে গিয়েছিলেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা শেখ সুজন আলী, সহকারী প্রক্টর আল জাবির। র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার সদস্য বিশিষ্ট একটি এন্টি র্যাগিং কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহবায়ক ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শেখ সুজন আলী, সদস্য সচিব প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান। সদস্যরা হলেন অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট মাসুদ চৌধুরী ও দোলন চাঁপা হলের প্রভোস্ট নুসরাত শারমিন তানিয়া।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নবীন এক শিক্ষার্থী জানান, র্যাগিংয়ের ঘটনায় ভীত হয়ে ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে আসছে না অনেক নবীন শিক্ষার্থী। আবার এ র্যাগিংয়ের ভয়ে অনেকেই ছাত্রবাস ছেড়ে বাড়িতেও চলে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন জানান, নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি পর্বের নামে র্যাগ বা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবিতে আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন করা হবে।
শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে সহকারী প্রক্টর আল জাবির জানান, আমি ওই শিক্ষার্থীদের কথা বলবো। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে আমার দায়িত্বের কি দরকার। শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে এটি স্পষ্ট যে তার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এতে সে ভীত হয়ে পরেছে। এই মানসিক নির্যাতন যারা করেছে তাদের বিচার না করতে পারলে আমি আমার সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করবো।
ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শেখ সুজন আলী জানান, আমরা তদন্ত না করে কিছু বলতে পারছি না। আসলে কি কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে। তবে আমরা ধারণা করতে পারি তারা হাল্কা র্যাগিংয়ের শিকার হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এন্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে। আমি এই কমিটির আহ্বায়ক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিএসও/তাজ