জাবি প্রতিনিধি
জাবি ছাত্রলীগের অস্থিরতায় বাড়ছে সহিংসতার আশঙ্কা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়নে সচেষ্ট হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এই অংশের নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরে সভাপতিকে বিতাড়নের জন্য তাকে ছাড়াই কর্মসূচি পালন, তার আবাসিক হলের পাশে অবস্থান, শোডাউনের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শনের মতো কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
আর হামলার আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন (জুয়েল রানার আবাসিক) আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের নেতাকর্মীরা। সভাপতিকে বিতাড়ন ও রক্ষার পাল্টাপাল্টি এসব পদক্ষেপে জুয়েল রানাপন্থি ও বিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১টার দিকে জুয়েল রানার বিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের সামনে সড়কে অবস্থান নিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে জুয়েল রানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে জুয়েল রানাপন্থি আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের প্রধান ফটক ও ছাদে অবস্থান নেন। এভাবে প্রায় আধাঘণ্টা চলার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, কয়েকটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে দুপক্ষকে শান্ত করেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। একটি সংগঠনের অভ্যন্তরে এ ধরনের সমস্যা কাম্য নয়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে আামদের কথা হয়েছে। আশা করছি তারা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করবেন।’
এদিকে সভাপতি জুয়েল রানার নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে একাট্টা হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনি হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, মীর মোশাররফ হোসেন হল, মওলানা ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের নেতাকর্মীরা। তবে জুয়েল রানার প্রতি সমর্থন রয়েছে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের নেতাকর্মী ও অধিকাংশ ছাত্রী হলের নেত্রীদের।
গত ৩০ জানুয়ারি জুয়েল রানার বিপক্ষ অংশের নেতাকর্মীরা জুয়েল রানার নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে বাইক শোডাউন দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি তারা সভাপতিকে বাদ দিয়ে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এরপর থেকে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে দুই অংশের মধ্যে।
এরই মধ্যে গত রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের পাশে এক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর সোমবার রাত ১১টার দিকে তারা আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে জুয়েল রানার প্রবেশ ঠেকাতে বটতলায় অবস্থান নেন। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রাত সোয়া ১টার দিকে তারা বটতলা ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ১ বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটি ইতোমধ্যে তিন বছর পার করেছে। এরই মধ্যে শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই চাকরি ও বিয়ে করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। এমনকি প্রায় ৬ মাস ধরে ক্যাম্পাসে নেই সাধারণ সম্পাদক এস এম সুফিয়ান চঞ্চল। ফলে দীর্ঘদিন সভাপতির একক নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় সংগঠনকে চাঙা করতে ও কর্মীদের উজ্জীবিত করতে তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন।
জুয়েল রানার বিপক্ষ অংশের অন্যতম শীর্ষ নেতা শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফফান হোসেন আপন বলেন, ‘বর্তমান কমিটির সভাপতি বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার জন্য সংগঠনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আমরা তার অপসারণ চাই। তাকে দ্রুত ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে কোনো প্রভাববলয় ছাড়া নতুন একটি কমিটি দিতে হবে।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমি তা মেনে নেব।’
পিডিএসও/তাজ